টেকনাফে ‘পণের বিনিময়ে অপহৃত’ ব্যক্তি মুক্ত, ‘জানে না’ পুলিশ

কক্সবাজারের টেকনাফে অপহৃত এক ব্যক্তিকে ‘মুক্তিপণের বিনিময়ে’ ছাড়িয়ে আনার কথা জানিয়েছেন তার স্বজনরা; তবে পুলিশ এই ঘটনা জানে না বলছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2021, 06:26 PM
Updated : 25 Nov 2021, 06:26 PM

ছৈয়দ আলম (৫০) নামের এই ব্যক্তি টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়াপাড়ার প্রয়াত আমির আহম্মদের ছেলে।

মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারীদের কথাবার্তা রোহিঙ্গাদের ভাষার মতো বলে ছৈয়দ আলমের ভাষ্য।

ছৈয়দ আলম ও তার স্বজনরা বলেন, গত সোমবার রাতে টেকনাফ স্থলবন্দর সংলগ্ন ১৪ নম্বর ব্রিজ এলাকা থেকে ছৈয়দ আলমকে অপহরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোররাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া নেচার পার্কে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে টেকনাফ থানা পুলিশ এমন কোনো ঘটনার কথা জানে না বলে দাবি করছে।

ছৈয়দ আলম বলেন, গত সোমবার রাতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে বাড়ি ফেরার পথে স্থলবন্দর সংলগ্ন ১৪ নম্বর ব্রিজ এলাকায় একদল মুখোশধারী ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে তাকে ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যায়। পরে তারা তাকে দমদমিয়ায় গহীন পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়।

ঘটনার পর খবর পেয়ে অপহৃতের স্বজনরা ওইদিন রাতেই টেকনাফ থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন বলে ছৈয়দ আলমের ভাষ্য।

ছৈয়দ আলমের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, গত সোমবার রাতে তার স্বামীকে অপহৃত হওয়ার পর অপহরণকারীরা দমদমিয়া এলাকার গহীন পাহাড়ে জিম্মি করে রাখে। পরে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে ছৈয়দ আলমকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।

“পরে টাকার লেনদেন নিয়ে অপহরণকারীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ হয়। এক পর্যায়ে অপহরণকারীরা আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে আমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়।”

হালিমা আরও বলেন, “বুধবার মধ্যরাতে অপহরণকারীদের কাছে দাবিকৃত টাকা পৌঁছাতে একটি গাড়ি যোগে আমার ছেলে মো. রাসেলকে নিয়ে আমি টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় যাই। টাকাগুলো নিতে অপহরণকারীরা আমাদের বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করায়। এক পর্যায়ে ভোররাতে দমদমিয়া নেচার পার্কের ভিতরে যেতে বলা হয়।”

তিনি বলেন, পরে নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়ে অবস্থান করার এক পর্যায়ে মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী দুই যুবক সেখানে উপস্থিত হয়। টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেয়।

মুক্তিপণের জন্য তার স্বামীকে অপহরণকারীরা নির্যাতন চালিয়েছে বলে হালিমার অভিযোগ।

পরে বৃহস্পতিবার বিকালে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফ থানায় হাজির হয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে জানানো হয়েছে বলেও হালিমা জানান।

হাসিনার অভিযোগ, সোমবার রাতে ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ পরে তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেনি।

ছৈয়দ আলম বলেন, “মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারীদের কথাবার্তা রোহিঙ্গাদের ভাষার মত। তাদের কাছে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। গহীন পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় জিম্মি রেখে মুক্তিপণের জন্য আমার উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। ”

এ নিয়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলীম ও পরিদর্শক (অপারেশন) খোরশেদ আলমের সঙ্গে ফোনে কথা হলে এ ধরনের কোনো তথ্য তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন।

তবে তারা এ ব্যাপারে ওসির সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে সোমবার রাতে টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেছিলেন, টেকনাফ স্থলবন্দর সংলগ্ন দমদমিয়া এলাকায় এক ব্যক্তি দুর্বৃত্তদের কর্তৃক অপহৃত হয়েছে বলে শুনেছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং খোঁজ-খবর নিতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।