সদর উপজেলার বগুলাডাঙ্গী গ্রামে মোমিন গড়ে তুলেছেন কালো মাছির খামার। সেখানে উৎপাদিত মাছির লার্ভা দিয়ে তিনি চালাচ্ছেন নিজের মুরগির খামার। ইতোমধ্যেই তিনি লার্ভা বিক্রিও শুরু করেছেন।
মোমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই খামার খুব দ্রুতই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছি।”
ইংরেজিতে একে বলে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই, বৈজ্ঞানিক নাম Hermetia illucens। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে এই মাছিকে বলা হয়েছে মাছ উৎপাদনের নতুন সুপারস্টার।
মোমিন বলেন, ২০১৪ সালে বাড়ির পাশেই একটি ব্রয়লার মুরগির খামার দেন তিনি। কিন্তু মুরগির খাবার ও অন্যান্য যাবতীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি। তবু চালিয়ে যান।
“২০২০ সালে খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে এবং ওষুধসহ অন্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি আর খামার চালাতে পারিনি। বন্ধ করে দিতে হয়।”
মোমিন বলেন, “চলতি বছর অগাস্টের শেষের দিকে গাইবান্ধায় জুলফিকার আল মামুন সুমন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হয়। সুমন সেখানে কৃত্রিম উপায়ে এই মাছির খামার গড়ে তুলেছিলেন। সেই মাছি থেকে সংগ্রহ করা লার্ভা মুরগি ও মাছের খামারে ব্যবহার করছিলেন সুমন।”
সুমনের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং দুই কেজি মাছি কিনে নিয়ে মোমিন নতুন আশায় শুরু করেন তার স্বপ্নের খামার।
গত দেড় মাসে তার খামারের মুরগিগুলো লার্ভা খেয়ে ভালভাবে বেড়ে উঠছে বলে তিনি দাবি করেন।
মোমিনুল বলেন, এই মাছি ১৫ দিন বয়সে ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার ৪৫ মিনিট পর মাছিটি মারা যায়। মাছির খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পচা খাবার ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম উপায়ে ডিম থেকে লার্ভা জন্ম নেওয়ার পর ২১ দিনে তা মাছ, মুরগি ও পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এলাকার অনেকেই মোমিনের খামার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং তারাও এমন খামার করার চিন্তা করছেন বরে জানিয়েছেন অনেকে।
ওই এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, “মোমিন যখন প্রথম এই মাছির লার্ভা বাড়িতে নিয়ে আসে তখন এলাকার মানুষজন ও পরিবারের লোকজন তাকে নানাভাবে বকা দিয়েছিল। কিন্তু এখন সবাই ভাবছে মোমিন সফল হতে যাচ্ছেন।”
‘মোমিন বেশ লাভবান হচ্ছেন’ বলে ওই এলাকার মোহন শীলের ধারণা।
খামারের মুরগির খাবার হিসেবে মাছি চাষের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করছেছেন কৃষি ও কীটতত্ত্ববিদরা।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পোল্ট্রি ফিডের বিকল্প খাদ্য হিসেবে মোমিনুল যে মাছির খামার গড়ে তুলেছেন, তাতে তিনি লাভবান হচ্ছেন।
“মোমিনের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। এমন খামার প্রতিটি উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মোমিনুল ইসলামকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”