হেফাজত নেতা মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় ‘স্ত্রীর’ সাক্ষ্য

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কথিত স্ত্রী জান্নাত আরার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 05:05 PM
Updated : 24 Nov 2021, 05:05 PM

বুধবার নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে এই সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে হাজির হয়ে মামলার বাদী মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না সাক্ষ্য দেন। পরে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে নিরাপত্তার মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।

গত ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের জান্নাত আরার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ গঠন করে আদালত।

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাকে আবার গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে একটি রুমে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগে গত দুই বছর ধরে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাদী জান্নাত আরা ঝর্না বলেছেন মামুনুল হক তাকে কলমা পড়ে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছেন।

আদালতে মামলার শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ আরও কয়েকজন।

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি রুমে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় খবর পেয়ে হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালিয়ে তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।

পরে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভাংচুর করেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর করে। পুলিশ গিয়ে তাদেরকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ বাধে।

এই ঘটনায় হেফাজতকর্মী মোহাম্মদ ফয়সাল বাদী হয়ে মামুনুল হককে হেনস্থা করার  অভিযোগে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে সোনারগাঁয় লিখিত অভিযোগ দেন। 

এই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেনকে বদলি করা হয়।

এর আগে ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

রয়েল রিসোর্ট ঘটনার ২৭ দিন পর সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে জান্নাত আরা ঝর্না বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।