বেড়া পৌর নির্বাচন: টুকুর বিরুদ্ধে ছেলের বিরোধীদের হুমকির অভিযোগ

পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2021, 05:43 PM
Updated : 21 Nov 2021, 05:43 PM

পাবনা-১ আসনের এই সাংসদের বড় ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন বেড়া পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।  

একই পদে শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন ও বড় ভাইয়ের মেয়ে এস এম সাদিয়া আলমও প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। 

আসিফ শামস রঞ্জনের পক্ষে কাজ না করায় আব্দুল বাতেনের এক কর্মীকে ‘হুমকি দেওয়ার’ একটি ভিডিও ক্লিপ তিনি (বাতেন) গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন এবং জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানান।

তবে শামসুল হক টুকু কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শামসুল হক টুকুকে নির্বাচন কমিশন থেকে এলাকার বাইরে থাকার অনুরোধ করলেও তিনি সেই নির্দেশনা মানেননি; এলাকাতেই রয়েছেন।

বাতেন বলেন, গত শুক্রবার প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা গ্রামে আব্দুল বাতেনের কর্মী ইয়ামিনসহ কয়েকজন যুবকের সঙ্গে সংসদ সদস্য টুকুর দেখা হয়।

এ সময় আব্দুল বাতেনের পক্ষে ভোট করায় টুকু তাদের হুমকি ধামকি দেন বলে বাতেনের অভিযোগ।

টুকুর সঙ্গে ইয়ামিনের পুরো কথোপকথনের ভিডিও ইয়ামিনের এক বন্ধু গোপনে ধারণ করেছেন বলে বাতেন জানান।

ওই ভিডিওতে ইয়ামিনের উদ্দেশে এমপি টুকুকে বলতে দেখা যায়, “আজকে নৌকার মিছিল করবি। নৌকা হলো জাতির প্রতীক। আমি কিন্তু মায়া দয়া করব নানে, পিষে ফ্যালবোনে।”

হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়ামিন বলেন, “আমি শুক্রবারই পরিবারসহ এলাকা ছেড়ে চলে এসেছি।”

টুকুর ছোটভাই বর্তমান মেয়র আবদুল বাতেন বলেন, “এলাকায় জনসমর্থন না পেয়ে সাংসদ টুকু ও তার ছেলে বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের এনে এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন। আমার কর্মী ও সমর্থকদের এলাকাছাড়া করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের চিঠি পেয়েও এলাকা না ছেড়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় আমার কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি প্রতিটি ঘটনার প্রমাণসহ (ভিডিও) নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি নির্বাচনের নিরপেক্ষ সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেবে।”

স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, “নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রধান অন্তরায় সাংসদ শামসুল হক টুকুর এলাকায় অবস্থান। তিনি কেবল সংসদ সদস্যই নন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তার কথা অমান্য করা পুলিশের জন্যও কঠিন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা শ্মশান বানিয়ে দেবেন।”

আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ বলেন, “রাস্তায় বেরোলেই আমার কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। পুলিশ আমাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এমপি সাহেবের কর্মীর মতো আচরণ করছে।”

এসব ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের বিষয়ে সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাকে চিঠি দিয়ে বলেছে আমি যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলি, আর সম্ভব হলে যেন এলাকার বাইরে থাকি। কিন্তু আমি তো এলাকার মানুষ, আমি যাবটা কোথায়? আমি এখানকার ভোটার। আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোনো কাজ করছি না।”

প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থীর এক সমর্থককে ‘পিষে’ ফেলার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, “কাউকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না? এগুলো মিথ্যাচার।”

বেড়া থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, “অকারণে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করছি। কে কী বলল তাতে আমাদের মাথাব্যাথা নেই।”