ইউপি নির্বাচন: মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীকে নৌকার সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কয়রা ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এক মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2021, 03:56 PM
Updated : 21 Nov 2021, 03:56 PM

এই হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও চার দিনেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

বুধবার উল্লাপাড়া উপজেলার মানিকদহ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ৮৭ বছর বয়সী খোরশেদ আলমের অভিযোগ।

তবে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত হেলাল উদ্দিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খোরশেদ আলমের অভিযোগ, বুধবার সকালে উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে মানিকদহ এলাকায় কয়রা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হেলাল উদ্দিনের কর্মী ও সমর্থকরা দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

হামলাকারীদের লাঠির আঘাতে তার ডান হাতের কনুইয়ের উপরে ও বাম পায়ে থেঁতলে যায় এবং তার সমর্থক আরও পাচ জন আহত হন বলে তার অভিযোগ। 

খোরশেদ আলম বলেন, “আমরা এই প্রত্যাশা নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি যে স্বাধীন দেশে মানুষ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পাবে। আমি প্রশাসনের কাছে সেটাই আশা করছি।” 

হামলার ঘটনায় পর বুধবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সন্মেলন করে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলম।

এছাড়া বুধবার রাতেই থানায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে উল্লাপাড়া থানা মোড়ে শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এদিকে, এই মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফিকে ‘নৌকা বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের হাইকমান্ডে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা।

গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শফিকুল ইসলাম শফি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

“তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে কাজটা ঠিক করেননি। সংগঠন বিরোধী এ কর্মকাণ্ডের বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দ্রুত লিখিত আকারে জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানানো হবে।”

খোরশেদ আলমের উপর হামলার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার উল্লাপাড়া থানা মোড়ে শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধারা

হামলার প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম সাহেবের উপরে হামলার ঘটনা সাজানো নাটক। আমি তার জন্য নৌকার বিরুদ্ধে যেতে পারি না।”

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী খোরশেদ আলম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক। দেশ স্বাধীনের পর উল্লাপাড়ায় প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তিনি টানা ৫ বার পূর্ণিমাগাতি ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন।

“একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোদ্ধা মারধরের শিকার হওয়ায় আমি মানবন্ধনে অংশ নিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। সেখানে নৌকার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি, এমনকি প্রার্থীর নামও উচ্চারণ করিনি। অথচ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলে বেড়াচ্ছেন - আমি নাকি নৌকা বিরোধী। আর এই ইন্স্যুতে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং দল থেকে বহিষ্কারের চেষ্টায় হাইকমান্ডে ও সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”

হামলার বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলার ঘটনায় থানায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এ হামলার পর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হেলাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী খোরশেদ আলমকে মারপিট করা হয়নি। তার সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শনিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলা থেকে বিরত ছিলেন।

স্বাধীনতা পরবর্তীতে উল্লাপাড়া উপজেলার বৃহত্তর পূর্ণিমাগাতি ইউনিয়নে টানা ৫ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম। তিনি রাজশাহী বিভাগে কয়েকবার সেরা ইউপি চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছিলেন। নিজ ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়নের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পুরস্কার হিসেবে তিনি সরকারিভাবে ভারত, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন।

আট বছর আগে পূর্ণিমাগাতির একাংশ ও পাশের দুর্গানগর ইউনিয়নের একাংশ মিলে গঠিত হয় কয়রা ইউনিয়ন।

তিন বছর প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে চালানোর পর ৫ বছর আগে প্রথমবারের মত এই ইউপিতে ভোট হয়। ওই সময় হেলাল উদ্দিন নৌকা প্রতীকে প্রথম বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। দুইবারই হেলালের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম।

এ দুইজনের বাইরে মোশারফ হোসেন (প্রতীক আনারস) নামে আরও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

আগামী ২৮ নভেম্বর এই ইউপিতে নির্বাচন হবে।