আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত জানানোর পরদিন শনিবার সকালে গাজীপুর শহরে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় কেঁদে ফেলেন জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবেন তিনি।
জাহাঙ্গীর বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীরা আমার সম্পর্কে ভুলভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছেন। আমি যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আমার ওই অডিও/ভিডিওর বিষয়ে কথা বলতে পারতাম, তবে প্রধানমন্ত্রী সবকিছু বুঝতে পারতেন। তখন তিনি হয়ত আমার ব্যাপারে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেন না।”
তিনি আবারও দাবি করেন, তার বক্তব্য কাটছাঁট করে বিকৃতভাবে সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে।
“আমার বক্তব্যের একটি অংশ সুপার এডিট করে তার ভিডিও এবং অডিও করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করা হয়েছে।”
ছাত্রলীগের সাবেক এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে তিনি যখন ছিলেন, তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ শুরু হয়।
“পরবর্তীতেও আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র থামেনি। প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।”
নিজেরও ‘ভুল’ হতে পারে স্বীকার করে মেয়র বলেন, “আমার ভুল হতে পারে। ভুলের জন্য আমি ক্ষমা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন আমাকে পুনরায় বিবেচনা করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেন বিবেচনা করে। আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক হিসেবে থাকতে চাই।”
জাহাঙ্গীরের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতিও ছিলেন তিনি।
এলএলবি পাস করলেও ব্যবসায়ী হিসেবেই নিজেকে তৈরি করেন জাহাঙ্গীর, সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
গাজীপুর উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার তার ইচ্ছাপূরণ না হলেও ২০১৮ সালে তিনি নৌকার প্রার্থী হয়ে মেয়র হন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাহাঙ্গীর। সেই পদ যাওয়ার পাশাপাশি তার মেয়র পদ থাকাও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর এক পক্ষের আনন্দ মিছিলের মধ্যে তার সমর্থকরা রাত থেকেই তার বাসায় ভিড় জমান। শনিবার সকালেও মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মেয়রের বাসভবনে হাজির হয়। এরপর দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে আসেন জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, “আমার বুঝ হওয়ার পর থেকেই আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের সাথে আছি। আমার অস্তিত্বের মধ্যে সব জায়গায় রয়েছে মাননীয় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর আদর্শ স্থান।
“বঙ্গবন্ধুর জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য যদি আমাকে জীবন দিতে হয়, আমি দেব। আমার অনুরোধ আমাকে যেন মিথ্যা কিছুর মধ্যে জড়িত না করা হয়। মিথ্যা অপবাদ যেন না দেওয়া হয়।”
জাহাঙ্গীর বলেন, “মেয়র হিসেবে তিন বছর আমি কোথাও চিফ গেস্ট হতে চাইনি। আমি রাস্তার ধারে ধারে ঘুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতায় মানুষের জন্য কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আকুল আবেদন করব গাজীপুরবাসীর জন্য এবং আমার জন্য।”