কুমিল্লার রাজনীতিক আফজল খান মারা গেছেন

কুমিল্লার প্রভাবশালী রাজনীতিক আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজল খান মারা গেছেন।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2021, 10:35 AM
Updated : 19 Dec 2021, 02:31 PM

ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় তিনি মারা যান বলে তার মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা জানান।

অ্যাডভোকেট আফজল খান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন; কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

আঞ্জুম সুলতানা সীমা জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে ভুগছিলেন। সম্প্রতি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় প্রথমে তাকে কুমিল্লার সিডিপ্যাথ হাসাপাতালে, সেখান থেকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

আফজলের খানের ছেলে এফবিসিসিআই পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান জানান, বুধবার সকাল ১১টায় প্রথম জানাজা নিজ বাড়ি নগরের ঠাকুরপাড়া খাঁ বাড়ি জামে মসজিদে; দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে ঠাকুরপাড়া খাঁ বাড়ি জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

কুমিল্লার এই প্রবীণ রাজনীতিকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আফজল খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় তিনি প্রয়াতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আফজাল খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আফজাল খানের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে আমি একজন বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহযোদ্ধাকে হারালাম।”

প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত আফজল খানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আফজল খানের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামও শোক প্রকাশ করেছেন।

আমির হোসেন আমু শোকবার্তায় আফজাল খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন; তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ওবায়দুল কাদের শোকবার্তায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “তিনি ছিলেন কুমিল্লার গণমানুষের নেতা। দেশ ও মানুষের কল্যাণে তিনি সর্বদা কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী।”

তাজুল ইসলাম শোকবার্তায় বলেন, “আফজল খান কুমিল্লার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি জাতির পিতার আদর্শ ও দর্শন বাস্তবায়নে আজীবন লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।”

এছাড়াও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী সাংসদ মো. মুজিবুল হক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সাংসদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, সাংসদ প্রাণ গোপাল দত্ত, সাংসদ আবুল হাসেম খান, সাংসদ রাজি মোহাম্মদ ফখরুল, সাংসদ নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল শোক প্রকাশ করেন। 

আফজল খান স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

পরিবার ও দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আফজল খান কুমিল্লা নগরের ঠাকুরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. ছাদেক আলী খান ও মা সাজেদা খানম। ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রসংসদে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬–এর ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। আফজল খান ১৯৭৩ সালে কুমিল্লা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৮ ও ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ১৯৯০ সালে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। ১৯৯৫ সালে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০৬ সালে তিনি ১৪ দলের কুমিল্লা জেলা শাখার সমন্বয়ক হন। ২০০৮ সালে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

স্থানীয়রা জানান, আফজল খান অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তিনি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। কুমিল্লা শিল্প ও বণিক সমিতির একাধিকবার সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহসভাপতি ছিলেন। সমবায় আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ সমবায় পুরস্কার হিসেবে স্বর্ণপদক ও বৃক্ষরোপণে অবদান রাখায় তিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।