প্রেমের টানে ফিলিপিন্স থেকে আসা পেট্রিয়াকা হলেন ইউপি সদস্য

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁয়ের তরুণ জুলহাস উদ্দিনকে ভালবেসে ১০ বছর আগে বাংলাদেশে এসছিলেন ফিলিপাইনের নাগরিক জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা। ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করে এখানেই সংসার শুরু করেন।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2021, 07:24 AM
Updated : 13 Nov 2021, 07:29 AM

সেই পেট্রিয়াকা এবার শ্বশুরবাড়ির এলাকা ফুলবাড়িয়া উপজেরার রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

বাংলাদেশে এসে এদেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার পর বাংলা বলতে না পারা পেট্রিয়াকা ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়েছেন এ ভাষায়। বাংলায় কথা বলতে শিখে জয় করেছেন সকলের মন।

পরিবার আর এলাকার মানুষের অনুপ্রেরণায় রাধাকানাই ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আর পেট্রিয়াকাকে নির্বাচিত করে তার প্রতি ভালবাসার প্রকাশ ঘটাল সবাই।

গত ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মাইক প্রতীকে এ ইউপি সদস্য পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৭ ভোট। বিদেশি নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে পুরো জেলাজুড়ে।

রাধাকানাই ইউনিয়নের দবরদস্তা গ্রামে জুলহাস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার সঙ্গে। তিনি শোনালেন ফিলিপিন্স থেকে বাংলাদেশে এসে গ্রাম্য জীবনে ধাতস্থ হয়ে ওঠার গল্প।   

২০০৮ সালে ফিলিপাইনের মিন্দানাও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পেট্রিয়াকা ফিসারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরিতে যোগ দেন সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে। সেখানেই চাকরি করতেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার জুলহাস।

সে সময় জুলহাসের সঙ্গে পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর দুয়েক পরে নিজেদের দেশে ফিরে যান তারা। তবে তাদের মধ্যে চলতে থাকে যোগাযোগ। সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের করার।

২০১০ সালের শেষের দিকে জুলহাস পাড়ি জমান ফিলিপিন্সে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পেট্রিয়াকা স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার অজপাড়াগাঁয়। নিজের পরিবার, দেশ, ধর্ম ছেড়ে বেছে নেন এই গ্রামীণ জীবন। তারপর নাম বদলে হন জেসমিন আক্তার।

পেট্রিয়াকা বলেন, “১০ বছর হয়ে গেছে আমি এখানে এসেছি। বাবা-মা ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়েছে। শুরুতে বেশ বিপাকে ছিলাম। কারণ আমি বাংলা বলতে পারতাম না। আর এখানকার মানুষ ইংরেজি বোঝে না।

“তবে আস্তে আস্তে শেখার চেষ্টা করেছি। এখন আমি সবার কথাই মোটামুটি বুঝি। আমিও কিছু কিছু বলতে পারি।”

নির্বাচন করার কোন পরিকল্পনা কখনো ছিল না জানিয়ে এ নারী আরও বলেন, “আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইনি, ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু এলাকার মানুষ জোর করে বলেছে নির্বাচন করতে। তারা আমাকে খুব ভালবাসে তাই তাদের কথা রাখতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

“প্রার্থী হওয়ার পর অনেক কষ্ট করেছি। সকালে নাস্তা খেয়ে প্রচারণায় বের হয়ে সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেছি। কিন্তু জয় পাওয়ার সব কষ্ট ঘুচে গেছে। মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি।”

মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এমন ভালবাসায় আপ্লুত এই বিদেশিনী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তার জয়ে খুশী স্বামী জুলহাসও।

জুলহাস উদ্দিন বলেন, “আমার পাশাপাশি আমার স্ত্রী এলাকাবাসীর মনও জয় করতে পেরেছে। তাদের জন্যই নির্বাচন করেছে এবং তারাই জয়লাভ করিয়েছে। আমার আশা সবার সুখে-দুখে সবসময় পাশে থেকে সাধারণ মানুষের উপকার করে যাবে।”

রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পছন্দের প্রার্থী পেট্রিয়াকা নির্বাচিত হওয়ায় খুশি সবাই। এলাকার লোকজন বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি করেছেন আনন্দ মিছিলও।

আছিয়া আক্তার নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “পেট্রিয়াকা নিজের দেশ, পরিবার ছেড়ে এখানে এসে আমাদেরকে আপন করে নিয়েছে। আমরাও তাকে অনেক পছন্দ করি। সেজন্যই তাকে আমরা ভোট দিয়ে পাস করিয়েছি। সে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবে।”