ছেলেকে হাফেজ বানাতে মায়ের চিঠি পাগলা মসজিদে

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুলে টাকা গোনার সময় একটি চিঠি পাওয়া গেছে, যেখানে মায়ের প্রত্যাশা তার ছেলেকে যেন হাফেজ বানাতে পারেন।

মারুফ আহমেদ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2021, 06:20 PM
Updated : 7 Nov 2021, 06:20 PM

ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের দানসিন্দুক খুলে শনিবার রেকর্ড ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে, যা ইতিপূর্বে দানসিন্দুক খুলে যেকোনো সময়ে পাওয়া টাকার পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে।

নগদ টাকা ছাড়াও এখানে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। এছাড়া নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি চিঠিও পাওয়া গেছে সিন্দুকে।  

এমন একটি চিঠিতে এক মা তার ছেলেকে যেন হাফেজ বানাতে পারেন তার জন্য দোয়া চেয়েছেন। আরেক চিঠিতে একজন শত্রুর শাস্তি কামনা করেছেন এবং আরেক নারী তার স্বামীর ঋণমুক্তি কামনা করেছেন।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, প্রতিবার দানসিন্দুক খোলার পর টাকা-পয়সার পাশাপাশি এরকম কিছু চিঠিও পাওয়া যায়। এসব চিঠির লেখকরা সৃষ্টিকর্তা বরাবর নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে ও মনোবাসনা পূর্ণ করতে নিবেদন পেশ করে থাকেন। তাদের লিখিত ভাষায় থাকে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আকুতি।

এবারের এক মায়ের চিঠিতে লেখা আছে, “আমার ছেলের নাম মো: মোরসালিন, বয়স ১৪ বছর, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল তাকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করিয়ে একজন হাফেজ বানাবো। কিন্তু আমি এ পর্যন্ত ৭টি মাদ্রাসা পরিবর্তন করেও তার মনোযোগ পড়ায় বসাতে পারিনি। এখন আপনারা আমার ছেলের জন্য একটু দোয়া করে দিবেন যেন সে একজন হাফেজ হতে পারে।”

মসজিদের মুসল্লি শফিকুল ইসলাম ফকির মতি বলেন, আল্লাহর রহমতের আশায় এই মসজিদে যেমন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ নামাজ পড়তে আসেন, তেমনি মনের কামনা-বাসনা পূরণে টাকা-পয়সা দান করে থাকেন। সেই ধারণা থেকেই দানসিন্দুকে আল্লাহর রহমত কামনা করে অনেকেই চিঠি দিয়ে যান।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভুইয়াঁ জানান, চিঠিগুলি আপাতত সংরক্ষণ করা হবে। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে চিঠিগুলি পুড়িয়ে ফেলা হবে। 

গতকাল সকাল ৯টায় মসজিদের ৮টি দানসিন্দুক খোলার সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গণনা শেষ হয়। টাকা গণনায় মসজিদ ও মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র-শিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১০ জন আনসার এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অংশ নেন। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জুন দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দানসিন্দুক খোলার পর সর্বোচ্চ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জে অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদাট প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। মসজিদ কমপ্লেক্সের অধীনে আছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা।

কথিত আছে, প্রায় পাঁচশ বছর আগে বাংলার বারো ভুঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামের এক ব্যক্তি নদীর তীরে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।