তবে লঞ্চ মালিকরা বলছেন তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিতেন। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছেন তারা।
সরকার বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বিকালে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। এ সুযোগে অন্য বিভিন্ন পরিবহনে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুক্রবার সকালে এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল বাঢ়ী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তিনি বলেন, “ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৫০ টাকা করা হয়েছে। তবে কেবিনের ভাড়া আগের মতই আছে।”
শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলো চলাচল করছে। ভোলা, ইলিশা, মজুচৌধুরীর হাট, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, মুলাদীর উদ্দেশ্যে বরিশাল নৌবন্দর ছেড়ে গেছে বিভিন্ন লঞ্চ। রাতে ছাড়বে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাস বহুল লঞ্চ। তবে সব রুটেই যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
ভাড়া বাড়ানোর কারণ বললেন বরিশাল-ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে চলাচলকারী এমভি সম্পার সুপারভাইজার মো. রনি।
তিনি বলেন, “এক ব্যারেল তেলে তিন হাজার টাকা দাম বেড়েছে। তাই যাত্রী ভাড়া বাড়াতেই হবে। ভাড়া না বাড়লে কোম্পানির লোকসান হবে। লোকসান দিয়ে কোনো কোম্পানিই ব্যবসা করবে না।”
তবে বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, “কোনো রুটেই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। পূর্বে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কম নেওয়া হত। এখন ডিজিলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান কমিয়ে আনতে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ডেকের ভাড়া ছিল ২৫৫টাকা। ২০১৩ সালে সরকার এই ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এত দিন যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হত। প্রতিবার আসা-যাওয়ায় ৩৫ থেকে ৪০ ব্যারেল তেলে লাগে। তাই লোকসান এড়াতে শুক্রবার থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।”
সরকার দাবি না মানলে তারাও ধর্মঘটে যেতে পারেন বলে জানান সাইদুর রহমান রিন্টু।
তবে বরিশালে বন্ধ রয়েছে বাস-ট্রাক চলাচল।
হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ফুটে উঠেছে যাত্রীদের ভোগান্তির নানা চিত্র।
বরিশাল শহরের কাশিপুর এলাকার ইমতিয়ার আহম্মেদ বলেন, চাকরির খোঁজে তিনি ঢাকায় থাকেন। বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে বরিশালে এসেছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঢাকায় একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা তার। কিন্তু সকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে শোনেন বাস বন্ধ। তাই ঝুকি নিয়ে বিকল্প পথে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
বাস বন্ধ থাকার সুযোগে স্বল্প দূরত্বে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ছোট যানের চালকরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, অটোরিকশা চালকরা ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চাচ্ছেন।
বাধ্য হয়েই তাদের চাপিয়ে দেওয়া বর্ধিত ভাড়ায় যেতে হচ্ছে বলে জানান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বজনকে দেখতে আসা বানারীপাড়ার বাসিন্দা মাওলাদা মোতাহার উদ্দিন।
অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করেন অটোরিকশা চালক হারুন ব্যাপারি।
তিনি বলেন, “বাস শ্রমিকরা আমাদের বাধা দেয়। কখনও কখনও লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে। তাই ঝুকি নিয়ে আমাদের চলতে হওয়ায় দুই-চার টাকা বেশি নিই।”
বরিশালে বন্ধ রয়েছে ট্রাকও।
বরিশাল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা বলেন, ডিজেলের দাম না কমানো পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলবে। বিকেলে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে বলেও জানান তিনি।