পলাশবাড়ীর সেই অচেনা প্রাণীটি ‘শিয়াল’

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ‘অচেনা’ প্রাণীটি ছোট প্রকৃতির ‘শিয়াল’ বা ‘খেঁকশিয়াল’ বলে শনাক্ত করেছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2021, 04:53 AM
Updated : 4 Nov 2021, 04:54 AM

গত দেড়মাস আগে পলাশবাড়ীর তালুক কেঁওয়াবাড়ি, হরিণাথপুর, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া, দুলালেরভিটা ও তালুকজামিরা গ্রামে একটি প্রাণীর আক্রমণ শুরু হয় বলে এলকাবাসী জানান।

এতে ফেরদৌস সরকার (৫৬) নামের এক মসজিদের ইমাম নিহত এবং অন্তত ১২ জন আহত হলে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।  আক্রান্তরা একে ‘অচেনা’ প্রাণীর হামলা বলে আসছিলেন।

প্রাণীটি শনাক্তের জন্য ঢাকা থেকে তিন সদস্যের একটি বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ দল মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান।

বিশেষজ্ঞ দলের কর্মকর্তারা মো. কামরুদ্দীন রাশেদ, মাহাবুব-ই-খোদা জুয়েল ও গাজী সাইফুল তারিক মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই গ্রামগুলো ঘুরে দেখেন এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।

বুধবার দুপুরে কামরুদ্দীন রাশেদ সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার ও বুধবার তারা নিহতের পরিবার ও আহতের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। পর্যবেক্ষণের সময় আক্রান্তদের ধরন, হামলার সময়, প্রাণীর আকার-আকৃতি, আচঁড়ের দাগ ও কামড়ের চিহ্নের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছেন।

এ বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ  বলেন, “আমরা অনেকটা জায়গা জুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি। এ সব এলাকায় ছোট ছোট শিয়াল ও খেঁকশিয়ালের অবাধ বিচরণ রয়েছে। রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা ছোট প্রকৃতির শিয়াল বা খেঁকশিয়াল।”

উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামের উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার বাড়ির পাশে ঘাস কাটতে গিয়ে একটি প্রাণীর হামলার শিকার হয়ে দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।

তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে কামরুদ্দীন বলেন,“ ইমামের বিভিন্ন চিকিৎসাপত্র ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তার সুচিকিৎসা হয়নি। তাছাড়া তার চিকিৎসায়ও অনেক বিলম্ব হয়েছে। অথবা চিকিৎসায় কিছু ভুলের কারণে তিনি মারা গেছেন।”

বিশেষজ্ঞ দলটির অপর সদস্য মাহবুব-এ-খোদা বলেন, “এখন শিয়ালের প্রজনন সময়। এছাড়া এই সময় অনেক পশু-পাখির গায়ের রঙ কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। যা এখানকার শিয়ালের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এজন্য লোকজন আগের দেখা শিয়াল আর এখনকার শিয়ালের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারছেন না।”

রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, “আতঙ্কিত মানুষের মধ্যে আমরা কাউন্সিলিং করব; যাতে তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়। এলাকার লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা আতঙ্কিত হয়ে সব প্রাণীকে মেরে না ফেলেন।”