ঢাকায় নিয়ে পাবনার শিশু-গৃহকর্মীকে ‘খুন্তির ছ্যাঁকা’

কাজ পছন্দ না হলেও শরীরে দেওয়া হতো গরম ‘খুন্তির ছ্যাঁকা’। কান্নার শব্দ বন্ধ করতে ‘মুখে পুরে দেওয়া হতো গামছা’।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2021, 03:55 PM
Updated : 30 Oct 2021, 03:55 PM

এই শিশু ও তার পরিবারের ভাষ্য, এমন ‘নির্যাতন’ চলেছে অন্তত নয় মাস। গত শুক্রবার গৃহকর্তা রাজধানী থেকে তাকে বাড়ির উদ্দেশে পাবনার গাড়িতে তুলে দেন। পরে গৃহকর্তার মা মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দেন।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের ৯ বছর বয়সী এই গৃহকর্মীর অভিযোগ, নির্যাতনের কথা কাউকে জানালে গৃহকর্ত্রী তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিতেন।   

মেয়েটির পরিবার জানায়, মেয়েটির বাবা পাঁচ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি ছাড়লে তার মা (৪৫) দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও সংসারে কষ্ট ঘোচেনি। কাজের সন্ধানে তিনি দুই শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু তিন বছর আগে ঢাকা থেকে আবার গ্রামে ফিরে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন তিনি।

এতেও সংসারের অভাব দূর না হওয়ায় ৯ বছর বয়সী মেয়েকে সাঁথিয়ার রায়েকমারী গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রহমানের ছেলে মিঠুর কাছে ঢাকার বাসায় পাঠান গৃহকর্মী হিসেবে।

মেয়েটির মায়ের অভিযোগ, সেখানে মিঠুর স্ত্রী শাপলা তার মেয়ের উপর সীমাহীন নির্যাতনে চালান। কাজ পছন্দ না হলেই শাপলা মেয়েকে মারধরসহ গরম খুনতির ছ্যাঁকা দিতেন। নয় মাস পর গত শুক্রবার [২৯ অক্টোবর] তাকে ঢাকা থেকে বাসে তুলে দেন পাবনার উদ্দেশে। পরে মিঠুর মা মায়া খাতুন মেয়েটিকে বাড়ি পৌছে দেন। 

সরেজমিনে শুক্রবার তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির দুই হাত, পিঠ ও মুখে নির্যাতনের চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে। খুনতির ছ্যাঁকার দাগ রয়েছে দগদগে।

শিশুটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “কোনো কাজ করতে বা নির্দেশ পালন করতে বিলম্ব হলে মিঠুর স্ত্রী শাপলা শুরু করতো অসহনীয় অত্যাচার। যাতে শব্দ বাইরে না আসে তার জন্য মুখের মধ্যে গামছা পুরে দিত। আমি বাড়ি আসতে চাইলে তারা আরও বেশি মারধর করত। মায়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে দিত না। বাড়িতে এসে নির্যাতনের কথা কাউকে জানালে আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে তারা।” 

শিশুটির মা জানান, “মিঠুর মা সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া বেগম ভরণপোষণ ও বিয়ের চুক্তিতে বাসার কাজের জন্য আমার মেয়েকে ঢাকার উত্তরার খিলক্ষেত তার ছেলের বাসায় পাঠান। মিঠুর মা মাসে মাসে ঢাকা গেলেও অত্যাচারের কথা গোপন রেখেছিল।”

তিনি মেয়ের প্রতি এমন নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে মিঠুর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

মিঠুর মা ক্ষেতুপাড়া আব্দুস সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মায়া খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেয়েটিকে কাজের জন্য ঢাকা পাঠিয়েছেন এবং সেখানে সে সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়েছে বলে ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ওসি আশিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থল ঢাকা হওয়ায় মামলা সেখানেই করতে হবে। আমি পরিবারকে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। শনিবার তারা ঢাকা খিলক্ষেত থানায় মামলার দায়ের করেছেন বলে শুনেছি।”