রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-রেজিস্ট্রার-কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

চুলকাটা নিয়ে যে আন্দোলনের সূত্রপাত, সহপাঠীর বিষপানের চেষ্টার পর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের অবরোধে আটকে পড়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তারা।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 07:31 PM
Updated : 24 Oct 2021, 07:33 PM

১৫ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে বেশ কয়েকজন রোববার বিকাল থেকে একাডেমিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। আর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে সামনে অবস্থান করছে শিক্ষার্থীরা।

বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে এ অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জাহিদুর রহমান শিরাত।

তিনি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাসড়ক অবরোধ থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ী বরখাস্ত না করা হলে, আমরা আবারও মহাসড়ক অবরোধ করব।

“এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিকালে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ৩০/৩৫ জন ক্যাম্পাসে আসেন। আমাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ায় আমরা ভবনের গেটে তালা দিয়ে সকলকে ভবনের ভিতরে অবরুদ্ধ করেছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেলের মোবাইল ফোনে রাত ১২টার দিকে যোগাযোগ করা হলে দতিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা আটকা পড়েছেন।

“আমরা ছাত্রদের বোঝাতে এসেছিলাম। আর তারা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারা মোট ৩৪ জনকে অবরুদ্ধ করেছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদের সংখ্যা অনেকটা কমে এলে পেছনের গেইট দিয়ে ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চলে গেছে। বর্তমানে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও শিক্ষকসহ ১৫ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট ২২ জন অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি।”

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের বলেছেন যে প্রশাসনের কার্যক্রমে তাদের ‘আস্থা নেই’।

শিক্ষার্থী জাহিদুর বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছা করলে দ্রুত ভার্চুয়ালি সিন্ডিকেট সভা করে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্থায়ী বরখাস্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু তারা সে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত ভিসি যদি এখানে আসেন, তাকেও অবরুদ্ধ করে আমরা একই দাবি করব।

“আমরা টানা ২৭ দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে আছি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুঝতে হবে।”

২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৬ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে।

এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক ছাত্র ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

তখন ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তাল ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা বাতেন।

ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সিন্ডিকেট সভা শেষে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কিন্তু তাকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতেই থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছিল শিক্ষার্থীরা।

গত ২২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় শনিবার থেকে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলন শুরু করে।

রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একাডেমিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী আত্মহত্যার চেষ্টায় কীটনাশক পান করতে যান। তখন তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিরাজগঞ্জ-নগরবাড়ি মহাসড়কের বিসিক মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে মহাসড়কের দু’পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।

ঘণ্টাখানেক পর সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর তাদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে।