টেকনাফে ‘তুচ্ছ ঘটনায়’ বাঙালি-চাকমা সংঘর্ষ, আহত ৯

কক্সবাজারের টেকনাফে ‘তুচ্ছ ঘটনায়’ বাঙালি ও চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে; এতে উভয়পক্ষের অন্তত নয় জন আহত হয়। ঘটনার সময় বৌদ্ধ বিহারের একটি রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 06:38 PM
Updated : 24 Oct 2021, 06:38 PM

টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান জানান, রোববার বিকালে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন কাটাখালীর কাজল চাকমার ছেলে মহলং চাকমা (৪৫), যতীন চাকমার ছেলে উনমদি চাকমা (৩০) ও মংপ্রুচিং চাকমা (২৫), থাইংচাহ্লা চাকমার মেয়ে মৃদুলী চাকমা (১৬), ক্যায়াচু অং চাকমার ছেলে আথুইমে চাকমা (৩০)।

বাঙালি আহতদের মধ্যে আছেন কাটাখালীর আব্দুল মজিদের ছেলে মোহাম্মদ মানিক (১৮), আব্দুর শুক্কুরের ছেলে রশিদ আমিন (১৭) ও মোহাম্মদ কালুর ছেলে মোহাম্মদ সেলিম (২৮)।

ঘটনার ব্যাপারে একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছে।

স্থানীয়দের বরাতে ওসি হাফিজুর বলেন, একটি ‘তুচ্ছ ঘটনার’ জেরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের কাছ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

“চাকমা সম্প্রদায়ের দাবি - দুপুরে কাটাখালী চাকমা পল্লীতে ‘কাটাখালী অরণ্য বৌদ্ধ বিহারের’ নলকূপে কয়েকজন চাকমা তরুণী হাড়ি-পাতিল ও থালা ধোয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় বৌদ্ধ বিহারটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন বাঙালি যুবক ওই তরুণীদের উত্ত্যক্ত করে।”

ওসি বলেন, এ নিয়ে ওই তরুণীদের শোর-চিৎকারে স্থানীয় কয়েকজন চাকমা যুবক ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বাঙালি ও চাকমা যুবকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

ওসি বলেন, পরে বিকালে এ ঘটনার জেরে বাঙালি যুবকরা বৌদ্ধ বিহারটির ঝুপড়ির আদলের তৈরি রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়। এ সময় হামলাকারীদের বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে চাকমা লোকজনের উপর হামলা চালায়।

অন্যদিকে বাঙালিদের বরাতি হাফিজুর বলেন, দুপুরে নিজেদের ধানক্ষেত থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাটাখালী চাকমা পল্লী এলাকায় এক বাঙালি যুবককে স্থানীয় ২/৩ জন চাকমা যুবক থামায়। এ সময় তার কাছে ইয়াবা ট্যাবলেট থাকার দাবি করে দেহ তল্লাশি শুরু করে।

“এতে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আরও ২/৩ জন বাঙালি যুবক উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।”

পরে বিকালে এ ঘটনার জেরে চাকমা লোকজন সংগঠিত হয়ে বাঙালিদের উপর হামলা চালায় বলে ওসি জানান।

হাফিজুর আরও বলেন, আহতদের মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের ৪ জন লোক কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

ঘটনার ব্যাপারে কাটাখালী চাকমা পল্লীর কিন্তুনু চাকমার মেয়ে পপি চাকমা বলেন, কয়েকজন চাকমা তরুণী স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের নলকূপে থালা ও হাড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ করছিল। এসময় বৌদ্ধ বিহারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কয়েকজন বাঙালি যুবক তাদের উত্ত্যক্ত করে। এতে চাকমা তরুণীরা প্রতিবাদ জানালে বাঙালি যুবকরা তাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়।

“পরে খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন চাকমা যুবক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাঙালি যুবকরা হামলা চালায়। বিকালে এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৩০/৪০ বাঙালি যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে বৌদ্ধ বিহার ও চাকমা পল্লীতে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারিরা বৌদ্ধ বিহারের রান্নাঘর ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।”

ঘটনার পর থেকে স্থানীয় চাকমারা আতংকে আছেন বলে এ চাকমা তরুণীর ভাষ্য।

এদিকে, কাটাখালীর সৈয়দ আহমদের ছেলে কায়ছার হামিদ বলেন, দুপুরে নিজেদের ধানক্ষেত থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তার ছোট ভাই তোফায়েল আহমদ। তিনি কাটাখালী চাকমা পল্লী এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন চাকমা যুবক তাকে থামায়। এসময় তার (তোফায়েল) সঙ্গে ইয়াবা ট্যাবলেট রয়েছে দাবি করে চাকমা যুবকরা দেহ তল্লাশি করার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

“পরে বিকালে প্রায় শতাধিক চাকমা নারী-পুরুষ সংঘবদ্ধ হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে। এক পর্যায়ে আমাকে লক্ষ্য করে চাকমারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় স্থানীয় পাড়া-প্রতিবেশী লোকজন এগিয়ে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।”

বাঙালি যুবক কায়ছারের অভিযোগ, “ঘটনাকে ভিন্নখাতে রূপ দিতে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেরা স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের একটি রান্নাঘরে ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। পরে বাঙালি বৌদ্ধ বিহারে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে রটিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু করে।”

এ ব্যাপারে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জালাল আহমদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তুচ্ছ ব্যাপারে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ব্যাপারে বিবাদমান উভয়পক্ষের কাছ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের রান্নাঘরে কে বা কারা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

তিনি জানান, ঘটনার পর টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীরা সদস্যরা। এলাকায় পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।

টেকনাফ থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এখনও পুলিশ সেখানেই অবস্থান করছে। ঘটনার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।