গ্রেপ্তার ইকবালকে নেওয়া হয়েছে কুমিল্লায়

‘কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে মন্দির-মণ্ডপে হামলার ঘটনায় আলোচিত যুবক ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করার পর কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2021, 07:20 AM
Updated : 22 Oct 2021, 09:10 AM

কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ বলেন, কক্সবাজারে গ্রেপ্তার ওই যুবকই কুমিল্লার ইকবাল, যাকে সিসি ক্যামেরায় ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সুজানগর এলাকার মাছ বিক্রেতা নূর আলমের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তাকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ‘ঘোরাঘুরির সময়’ গ্রেপ্তার করা হয় বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম (ক্রাইম অ্যান্ড অ্যাডমিন) জানিয়েছিলেন। 

সেই খবর পাওয়ার পর কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকারের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কক্সবাজারে যান। ইকবালকে নিয়ে সকালে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়ে বেলা ১২টার পর তারা কুমিল্লায় পৌঁছান। 

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইকবালকে প্রথমে পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়। পরে তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে।

পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ বলেন, “আমাদের টিম নিশ্চিত হয়েছে। আটক ব্যক্তিই কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখেছেন। তাকেই সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে।”

কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড় পূজা মণ্ডপে বুধবারের হামলার সময় প্রতিমা ভাঙচুর করে দিঘীতে ফেলে দেওয়া হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পন সংঘের পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাংচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে।

তার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন।

এর পরের কয়েকদিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়। তাতে নোয়াখালীতে নিহত হয় দুজন।

এর মধ্যে কুমিল্লার পুলিশ বুধবার নানুয়া দীঘির পাড়ের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইকবাল নামে ওই যুবককে শনাক্তের কথা জানায়।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই যুবক পূজামণ্ডপের দিক থেকে বেরিয়ে আসছেন। এ্ই যুবকই ইকবাল হোসেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে এক যুবককে রাত ২টার পর স্থানীয় দারোগাবাড়ী শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) এর মাজার থেকে বেরিয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায়, তখন তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল।

এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায় আরেক ভিডিওতে, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির ওই পূজামণ্ডপে থাকা হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন রাখা ছিল। তখন হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদাটি পাওয়া যায়নি।

সিসিটিভির আরেকটি ভিডিওতে হামলার দিন নানুয়া দিঘীর পাড়ে উত্তেজিত জনতার সাথেও দেখা গেছে ইকবালকে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবক মাজার থেকে বেরিয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যাচ্ছেন।

পুলিশ বলছে, এক সময় রঙ মিস্ত্রির কাজ করা ইকবালকে এলাকাবাসী একজন ‘ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত’ হিসেবে জানে। আর ইকবালের মা আমেনা বিবির ভাষ্য, তার ছেলে দশ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন।  

পুলিশ কর্মকর্তারা ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলার আশা করলেও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত তা নিয়ে সংশয়ী।

বৃহস্পতিবার তিনি চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, “কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে শনাক্ত করা হলো.. গতকাল টিভির মাধ্যমে দেখলাম তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিল.. ‘ভবঘুরে’। কখনো কখনও এরকম যাদের ধরা হয়, কখনও বলে ‘পাগল‘,  না হয় ‘ভবঘুরে’।

“এ ভবঘুরে কী করে পবিত্র কোরআন শরিফ চিনল? যদি ভবঘুরে হয়ে থাকে নতুন বই কোত্থেকে আনল? কে দিল? আর হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরাল, যাতে হাতের কিছু না হয়, সেখানে আবার পবিত্র কোরআন শরিফটা দিয়ে দিল?- এটা কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না।“

এই ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, “চক্রান্তকারীরা এর পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে।”