ভোর রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাদ্রাসায় হামলা, নিহত ৬

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের এক মাস পার না হতেই কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরের এক মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে ছয়জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদককক্সবাজার প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2021, 03:02 AM
Updated : 21 Dec 2021, 03:42 PM

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. শিহাব কায়সার খান বলছেন, শুক্রবার ভোর রাত ৪টার দিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৮ নম্বর ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই হামলা হয়।

নিহতরা সবাই ওই ক্যাম্পের এইচ-৫২ ব্লকের ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ' মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র বা ভলান্টিয়ার।

শিহাব কায়সার বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছি আমরা।”

এপিবিএনের পক্ষ থেকে আগে সাতজনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ পরে জানান, ছয়জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও একজনকে পাঠানো হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সকালে ওই মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন।   

এপিবিএন এর এক বার্তায় হামলাকারীদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী’ হিসেবে।  সেখানে বলা হয়, হামলায় ঘটনাস্থলেই চার রোহিঙ্গা নিহত হন। খবর পেয়ে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে বাকিদের মৃত্যু হয়।

স্থানীয়ভাবে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায় ওই মাদ্রাসার মেঝেতে রক্ত ছড়িয়ে আছে। নিহতদের স্বজনরা সেখানে বিলাপ করছেন। একটি ছবিতে মাদ্রাসার পাশে কারও হাতে কাটা পড়া দুটো আঙুল পড়ে থাকতে দেখা যায়। 

হামলায় জড়িত সন্দেহে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার নাম মুজিবুর রহমান। তার কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে এপিবিএন। 

কর্মকর্তারা বলছেন, ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় 'মদুতুল উম্মা' মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ‘ব্লকরেইড’ (ঘেরাও করে তল্লাশি) চালিয়েছিলেন। অন্যান্য ক্যাম্প এলাকাতেও একই সাথে অভিযান চালানো হয়েছে। এর ঘণ্টা দেড়েক পর দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ' মাদ্রাসায় ওই হামলা হয়।

নিহতরা হলেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ১২ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. ইদ্রীস (৩২), নয় নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন (২৪), মাদ্রাসার ছাত্র ও ১৮ নম্বর ক্যাম্পের আজিজুল হক (২২), একই ক্যাম্পের ভলান্টিয়ার মো. আমীন (৩২), মাদ্রাসার শিক্ষক ও ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), মাদ্রাসার শিক্ষক ও ২৪ নম্বর ক্যাম্পের হামিদুল্লাহ (৫৫)।

এছাড়া ওই মাদ্রাসার ছাত্র ও ১৮ নম্বর ক্যাম্পের নুর কায়সারকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ পরে জানান।

ফাইল ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হওয়া কক্সবাজারের এই ক্যাম্পগুলোতে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোকে ‘রোহিঙ্গা ডাকাত’ বা ‘চোরাকারবারিদের’ কাজ বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। 

তবে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ খুন হওয়ার পর ক্যাম্পে সক্রিয় বিভিন্ন পক্ষের অনেক বিষয় এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনায় আসছে।  

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে গুলি করে হত্যা করা মুহিবুল্লাহকে, যিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন।

পরিবারের অভিযোগ, প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করা মুহিবুল্লাহকে রোহিঙ্গাদের আরেকটি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) হত্যা করেছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘অস্থিরতা’ তৈরির চেষ্টায় ‘মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র আসছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

পুরনো খবর