ফেনীতে ফেইসবুক লাইভে স্ত্রী হত্যা, স্বামীর ফাঁসির রায়

ফেনীতে ফেইসবুক লাইভে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2021, 09:07 AM
Updated : 21 Oct 2021, 09:07 AM

ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন।

তাছাড়া আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিচারক।

সাজাপ্রাপ্ত  ওবায়দুল হক ভূঁঞা টুটুল (৩৩) ফেনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারাহিপুর এলাকার গোলাম মাওলা ভূঁঞার ছেলে।

রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে (২৮) ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল পারিবারিক কলহের জেরে হাত-পা বেঁধে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন টুটুল। হত্যার এ দৃশ্য ফেইসবুকে লাইভে দেখান টুটুল। লাইভে টুটুল সে সময় বলেন, ‘আমার পরিবারকে ব্লাকমেইল করত তাহমিনা। আজ থেকে আমার পরিবার আর ব্লাকমেইলের শিকার হবে না।’ লাইভে এসে টুটুল তার স্ত্রীকে হত্যার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান এবং ঘটনার জন্য নিজেই দায়ী বলে স্বীকার করেন। লাইভে তার মেয়েকে দেখভালের জন্য তিনি সবার কাছে অনুরোধ করেন।

এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে রাজধানী ঢাকায় লকডাউন শুরু হলে কাপড়ের দোকানের চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন টুটুল।

স্ত্রীকে হত্যার পর টুটুল নিজেই ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে তার বাড়িতে যেতে বলেন। হত্যায় ব্যবহৃত দা ও টুটুলের মোবাইল ফোন জব্দ করে  পুলিশ।

মামলার নথি অনুযায়ী, তাহমিনা আক্তার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের সাহাব উদ্দিনের মেয়ে। বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে বিয়ে করেন ফেনীর টুটুলকে। বিয়ের পর থেকে অভাব-অনটন নিয়ে পরিবারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হত। যৌতুকের জন্য তাহমিনাকে টুটুল নির্যাতন করেন এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে কয়েক দফা টাকা নেন। একপর্যায়ে আরও টাকার জন্য চাপ দিলে তাহমিনা দিতে অপরারগতা প্রকাশ করেন।

ওই আদালতের পিপি হাফেজ আহমেদ মামলার নথির বরাতে বলেন, হত্যার দিনই তার বাবা সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ইমরান হোসেন গত বছরের ১১ নভেম্বর আসামি টুটুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর টুটুলের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করে। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত এই সাজা দেয় বলে জানান পিপি।

রায়ে নিহত তাহমিনার বাবা স্বন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। দ্রুত রায় কার্যকর হলে মেয়ের আত্মা শন্তি পাবে। অবিলম্বে রায় কার্যকর হবে এই প্রত্যাশা করছি।”

তবে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আবদুস সাত্তার।

তিনি বলেন, ‘শুধু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির ভিত্তিতে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা দ্রুত উচ্চ আদালতে আপিল করব।”