‘টয়লেট থেকে দেখছিলাম ঘরে আগুন দিচ্ছে’

“আমাদের টয়লেট বাঁশঝাড়ের ভিতর। আমি টয়লেটের ভিতর থেকে দেখছি ১৫-২০ জন মানুষ আমাদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। বাড়িতে আগুন দিচ্ছে। আমি সেখান থেকে বের হতে পারছি না।”

আফতাবুজ্জামান হিরু রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2021, 12:09 PM
Updated : 19 Oct 2021, 07:03 PM

রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ার রতন কুমার সেদিনের দেখা নিজের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে।  

ফেইসবুকে কথিত ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে রোববার পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় করিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে একদল লোক।

এই তাণ্ডবে রতন কুমারের বাড়িঘরসহ সঞ্চিত সব সম্পদ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।

এই গ্রামের স্বর্ণবালার ছেলে রতন কুমার বলেন, “আমি বের হলে যদি তারা আমাকে মেরে ফেলে - তাই আমি বের হই নাই। আমি সেখান থেকে রাত ১২টার পর বের হই। বাড়িতে এসে দেখি গরু বিক্রি করা ১ লক্ষ ২০ টাকাসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে তারা।”

তারা ‘নারায়ে তকবির’ শ্লোগান দিতে দিতে আসে উল্লেখ করে রতন কুমার তাদের বিচার দাবি করেছেন।  

তিল তিল করে গড়া সারা জীবনের সঞ্চয়সহ বসতঘর নিমেষেই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে স্বর্ণবালার। তার একমাত্র সন্তান রতন কুমার। ছেলেকে বাঁচাবার জন্য বাড়ি সংলগ্ন বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে রাখেন।  

সব সঞ্চয় হারিয়ে স্বর্ণবালা এখন নিঃস্ব। কেউ সান্ত্বনা দিতে গেলে হাউ-মাউ করে কাঁদছেন।  

স্বর্ণবালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেই রাতের হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে হাউ-মাউ করে কাঁদতে থাকেন।

“বাবা হামরা গ্রামত থাকি। হামরা সন্ধ্যা হলে ভাত খাওয়াদাওয়া শেষে শুয়ে পড়ি। সেই সন্ধ্যার পর প্রতিদিনের মত আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আঙ্গিনায় ভাত খাইতে বসছি। আর সবাই এসে হামার বাড়িত হামলা চালায়।”

তখন ছেলে রতনকে তিনি বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ে শৌচাগারে লুকিয়ে রাখেন।

“ভাত খাওয়া ছেড়ে আমার ছেলে রতন কুমারকে টয়লেটে লুকিয়ে রাখি রাত ১২টা পর্যন্ত। আমার একটা ছেলে; আর আমার কেউ নাই। যদি আমার ছেলেকে তারা মেরে ফেলে, আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?”

পুলিশ আসার পর তার ছেলে টয়লেট থেকে বের হন বলে তিনি জানান।

দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিল্লার ঘটনার পর রোববার রাতে পীরগঞ্জের এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে রামনাথপুর ইউনিয়নে জেলেপল্লীর হিন্দু পরিবারের উপর হামলা হয়। হামলাকারীরা ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাটও করে।