মুহিবুল্লাহর স্বজনরা যেতে চায় অন্য কোনো দেশে

অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবার ও তাদের ঘনিষ্ট ১৮টি পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নিতে চান বলে এক স্বজন জানিয়েছেন।

কক্সবাজার প্রতিনিধিশংকর বড়ুয়া রুমি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2021, 03:02 PM
Updated : 17 Oct 2021, 05:10 PM

এই ব্যাপারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানান নিহত মুহিবুল্লাহর ভাগ্নে মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ।

রশিদুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের (আরএসপিএইচআর) ভাইস চেয়ারম্যান। এই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ।

মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ রোববার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, সন্তান, মা, ভাইসহ স্বজনদের ১৮টি পরিবারের সদস্যরা কুতুপালং ক্যাম্পে নিরাপদ মনে করছেন না। এসব পরিবারের ৯৪ জন সদস্যকে বর্তমানে ক্যাম্পের বাইরে অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। তবে তারা সেখানে থাকতেও রাজি নয়।

তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় কোনো দেশে যেতে চাই। আমাদের এই ইচ্ছার কথা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি।”

উখিয়ার কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ডব্লিউ ব্লকের বাসিন্দা রশিদুল্লাহ। তিনি নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর আপন ভাগ্নে এবং এই হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানান।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে অজ্ঞাত ব্যক্তির গুলিতে নিহত হন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে মাস্টার মুহিবুল্লাহ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এই হত্যায় মিয়ানমারের সংগঠন আরসা জড়িত। হত্যাকাণ্ডের পরও ঘটনায় জড়িতরা মোবাইল ফোনে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ট স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে। এ নিয়ে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরপর তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

রশিদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরও বলেন, তার মামা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হুমকিদাতারা বলছে- মুহিবুল্লাহ হত্যা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ নিয়ে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরাসহ ঘনিষ্ট স্বজনরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তিনি বলেন “শুধু আমাকে নয়, মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, ভাই হাবিবুল্লাহ, আহমদ উল্লাহ, চাচাতো ভাই নুরুল আমিন, মুহিবুল্লাহর সহকর্মী মো. নকিম, মাস্টার আবদুর রহিম, মাস্টার জুবাইর, ছৈয়দ আলমসহ আরও কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ ঘনিষ্ট ১৮টি পরিবারের অন্তত ৯৪ জন সদস্যকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে আমরা এক প্রকার বন্দি জীবন কাটাচ্ছি। আমরা এখানেও নিরাপদ মনে করছি না।”

রশিদুল্লাহ বলেন, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হুমকির বিষয়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রশাসন ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) আইন-শৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।

“এরপরই গত ১৩ ও ১৪ অক্টোবর মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ ঘনিষ্ট স্বজনদের ক্যাম্প থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন প্রশাসন। তারা এখন প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অবস্থান করছেন।”

আরএসপিএইচআর ভাইস চেয়ারম্যান রশিদুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ছাড়া তৃতীয় কোনো দেশে যেতে চাই। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়কে (আরআরআরসি) গত ১০ অক্টোবর বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। এরপরই আমাদেরকে ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে।”

এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ মো. রেজওয়ান হায়াত বলেন, “নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর স্বজনরা অন্য কোনো দেশে যেতে চায় কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। তাদের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো লিখিত আবেদন পাওয়া যায়নি।”

এ ধরনের কোনো আবেদন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মুহিবুল্লাহর স্বজনদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকে এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

আরও পড়ুন