শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই সংঘর্ষে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিনসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন, তাদের বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশপাশের জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হয়েছে, ভূমি অফিসে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফেনী শহরের ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন ট্রাংক রোড এলাকায় জয়কালী মন্দিরের সামনে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।
ওই সময় পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে এক দফা সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর শহরের বড় বাজার, বড় মসজিদ, সেন্ট্রাল হাই স্কুল, তাকিয়া রোড ও কাঁচাবাজার এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি ফিল্ডে আছি। পরে বিস্তারিত বলতে পারব।“
শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারীর বলেন, “সংঘর্ষ চলাকালে ফেনীর বড় বাজারে হিন্দুদের প্রায় ৫০টি দোকানে ভাঙচুর এবং ৮ থেকে ১০টির ক্যাশ ও আসবাবপত্র লুট করা হয়েছে।“
রাতে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরো শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এশার নামাজের পর জেলা ভূমি অফিসের নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ভূঁইয়া।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, বিকালের পর থেকে রাত পর্যন্ত আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
আহতেদর মধ্যে ইনডিপেনডেন্ট টিভির ক্যামেরা পার্সন রিয়াদ মোল্লাও রয়েছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ফেনী জেলা শাখার সভাপতি শুকদেব নাথ তপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বানে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে জয়কালী মন্দিরের সামনে তাদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
“পুলিশ বলেছিল সোয়া ৪টায় আসরের নামাজের সময় শেষ হলে তখন মিছিল করা যাবে। সে অনুযায়ী বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। তখন ট্রাংক রোড বড় মসজিদের সামনে থেকে হামলা শুরু হয়।“
তার ভাষ্য, মসজিদের এলাকায় আগে থেকেই লোক জড়ো হয়েছিল। তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে এবং ঢিল ছুড়তে থাকে।
পুলিশ তখন দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নেয় জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের পরামর্শে তারা কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে সেখান থেকে সরে যান।
হামলাকারীদের ছোড়া ‘পেট্রোল বোমায়’ মন্দিরের আসবাবপত্র পুড়ে গেছে বলে জয়কালী মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন দাসের ভাষ্য।
সন্ধ্যার পর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে একটি সেবাশ্রম চত্বরে রাখা একটি লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি হামশার শিকার হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাঙ্ক রোডের ফেনী অংশসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরজুড়ে তৈরি হয় আতঙ্ক।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা শুকদেব নাথ তপন বলেন, “ফেনী সদরের তাকিয়া রোডের ভেতরের বাজার এবং ইসলামপুর রোডে হিন্দুদের মালিকানাধীন ৩০-৩৫টি দোকানে ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়েছে। জগন্নাথবাড়ি মন্দির, গাজীগঞ্জ আশ্রম এবং ফেনীবাজার কালীবাড়ি মন্দিরেও হামলা হয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে। স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে।
কারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
তবে র্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেছেন, “তৃতীয় একটি পক্ষ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা প্রতিহত করেছি। তাদের কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।”
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, “সংঘর্ষের পর কিছু দোকানপাট ভাংচুরের খবর আমরা পেয়েছি, সেটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের স্যারদের মিটিং চলছে, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
আরও পড়ুন