জিও ব্যাগও বাঁচাতে পারল না কুমার নদের বেড়িবাঁধ

জিও ব্যাগ ফেলেও কুমার নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায়নি মাদারীপুরের টেকেরহাট-কালিবাড়ী বেড়িবাঁধ যেটি সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

রিপনচন্দ্র মল্লিক মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2021, 01:17 PM
Updated : 8 Oct 2021, 01:17 PM

ভাঙন থেকে বাঁচাতে সড়কটির ৮৫ মিটার অংশে জিও ব্যাগের ফেলা করা হয়। ডাম্পিং শেষ হতে না হতেই পাকা সড়কটির প্রায় ২৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ফলে রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলা এবং জেলার সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।

এখনও হেঁটে চলাচল করা গেলেও কোনো যানবাহন যেতে পারছে না। তবে এভাবে চললে হেঁটেও এই রাস্তা পার হওয়া যাবে না।

শুক্রবার বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট-কালিবাড়ী ফিডার সড়কের গোয়ালবাথান এলাকায় প্রায় ২৫০ মিটার পাকা সড়ক কুমার নদে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কটির কার্পেটিং, বিটুমিন, ইট, বালুসহ জমির মাটি খসে খসে নদীতে পড়ছে। সড়কটির অন্য পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, উঁচু স্থানে রয়েছে বসতঘরও।

নদীতে বিলীয় হয়ে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে কোনো তিন চাকার যানবাহন চলতে পারছে না। ভাঙনের অংশটুকু অনেকেই পায়ে হেঁটে পার হয়ে তারপর ইজিবাইক বা তিন চাকার যানবাহনে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। ফলে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

টেকেরহাট-কালিবাড়ি ফিডার সড়কটি ব্যবহার করে এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করে। এ ছাড়া সড়কটি কুমার নদের বেড়িবাঁধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে থেকে জানা গেছে, স্টেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে কুমার নদের ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টেকেরহাট-কালিবাড়ি সড়কের গোয়ালবাথান এলাকা। তাৎক্ষণিক ভাঙন ঠেকাতে সড়কটির ৮৫ মিটার অংশ চিহ্নত করে নদীর পাড়ে ফেলা হয় ৮ হাজার জিও ব্যাগ। জিও ব্যাগের ডাম্পিং শেষ হওয়ার পরেই নদীর পানি কমতে শুরু করে। পানি কমায় আবার ভাঙন শুরু হয়।

গত দুই দিনে ভাঙনের সড়কটি প্রায় ২৫০ মিটার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে প্রায় তিনশ মিটার সড়ক সড়ক ও একাধিক বসতঘর ও ফসলিজমি।

গোয়াল বাথান এলাকার কৃষক আনিচ মাতুব্বর (৭০) বলেন, “৪০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চাষ করছি। রাস্তাটি কুমার নদে ভেঙে যাচ্ছে। পুরোটা ভেঙে গেলে যেকোনো সময় ফসলের ক্ষেতে পানি চলে আসবে। সব ধান তলিয়ে যাবে।”

নারায়ণ হালদার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, “হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েই চলেছে। ক্রমেই ভাঙন আমাদের ফসলি জমির দিকে আগ্রসর হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে নামেমাত্র জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে, যা কোনো কাজে আসে নাই এখানে। আমাদের দাবি, সড়ক ও এলাকার মানুষের ফসলি জমি ও বসতঘর রক্ষায় এখানে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।”

কুমারে নদের ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মো. ফেরদাউস হাওলাদারের বসতঘরসহ ফসলি জমি।

তিনি বলেন, “কুমার নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখনই ভাঙন রোধ না করা হলে বিদ্যানন্দী মাঠের সকল ফসলি জমি নদের পানিতে ডুবে যাবে। আমরা বিপদে পড়ো যাব।”

হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “সড়কটি রক্ষার জন্য আমি অনেকবারই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ কাজ করার আশ্বাস দিলেও সেভাবে কোনো কাজই করেনি।”

তাই সড়কটি ২৫০ মিটারের বেশি কুমার নদের গর্ভে চলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ না করা গেলে এখানে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ এলাকায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।”

জানতে চাইলে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, “গত মাসে নদের ভাঙনে সড়কটির ৮৫ মিটার অংশের অর্ধেক বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আমরা তাৎক্ষনিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করেছিলাম।”

এ ছাড়া মাদারীপুরে নদ-নদীর ভাঙন রোধে বড় প্রকল্প পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে নদের শাসন কাজ করে সড়কের পাশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।