গোপালগঞ্জে বিনাধানে ‘আয় বেড়েছে’ কৃষকের

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত ‘উচ্চ ফলনশীল’ আগাম আমনের জাত ‘বিনাধান-১৬’ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2021, 04:08 AM
Updated : 8 Oct 2021, 04:08 AM

কৃষকরা জানান, প্রচলিত আমন ধানের শীষ বের হতে একশ দিনের বেশি সময় লাগে। কিন্তু বিনাধান-১৬ পাকতে একশ দিনের বেশি সময় লাগে না; আর ফলন বেশি হওয়ায় আয় বেড়েছে। তারা এ ধানের আবদ করে ‘বাম্পার ফলনের’ পাশাপাশি ‘উচ্চমূল্যে’ খড়ও বিক্রি করছেন।

বিনা গোপালগঞ্জ উপ-কেন্দ্রের ইনচার্জ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আকন্দ জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর, সুকতাইল, জালাবাদ ও কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর, বেথুড়ি, ফুকরা ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ বছর ধরে এ ধানের আবাদ হয়ে আসছে।

“এ বছর জেলার ৩ শ’ কৃষক ১৫০ হেক্টর জমিতে বিনাধান-১৬ আবাদ করেছেন। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬ টন ফলেছে। প্রচলিত আমনের তুলনায় এ ধান দেড় মাস আগে পেকেছে।”

তিনি বলেন, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে তারা মাঠ গবেষণার কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণে তাদের চেষ্টা আব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকেরাও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন। কৃষকরা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আয় বৃদ্ধি করছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুমন খান বলেন, প্রচলিত আমন ধান চাষ করে প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ টন ফলন পাওয়া যায়। এ ধান পাকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে।

“সেখানে বিনাধান-১৬ জুলাই মাসে রোপন করেছি। ১ শ’ দিনে এই ধান পেকেছে। আমরা এখন পাকা ধান কাটছি।”

তিনি বলেন, “প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬ টন ফলন দিয়েছে। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি আমরা বেশি দামে খড় বিক্রি করতে পারছি। স্বল্প জীনকাল সম্পন্ন এ ধানের আবাদ করে আমরা একই জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪টি ফসল ফলিয়ে লাভবান হচ্ছি।”

একই গ্রামের কৃষক মাহাতাব উদ্দিন বলেন, “এ ধানের ফলন ভালো। ধান উৎপাদনে সময় কম লাগে। চাল সরু। বাজারে এ ধান একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই আগামীতে আমরা লাভজনক এ ধানের চাষ করব।”

গোপালগঞ্জ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবদাস মল্লিক বলেন, “বিনাধান-১৬ স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল। এ জাত গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র থেকে নিয়ে কৃষকেরা ৫ বছর আগে আবাদ শুরু করে।

“তারা এ ধানের বীজ সংরক্ষণ করে প্রতিবছর ধানের আবাদ বৃদ্ধি করছে। এতে তাদের আয় বাড়ছে। তাই কৃষকের কাছে এ ধানের জাত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রপ্সারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, বিনাধান-১৬ ধানের আবাদ করলে একশ দিনে কাটা যায়। ধান কাটা হয়ে গেলে ওই জমিতে ডাল, পাটসহ অন্য ফসলও ফলানো যায়। তাই বিনাধান-১৬ এর বদৌলতে কৃষক এক জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪টি ফসল করতে পারছেন।

বিনার শস্য বিন্যাস প্রদর্শণীর মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে; এ প্রযুক্তি গ্রহণ করে কৃষক অধিক সফল ফলিয়ে আর্থিকভাবে  লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে ফসলের নিবিড়তা বাড়িয়ে কৃষকের আয় আমরা দ্বিগুণ করে দিতে চাই। কৃষকরা যাতে বছরব্যাপী  ফসল আবাদের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

“তাই কৃষককে বিনাধান-১৬ আবাদে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা ঠিক রেখে ২ ফসলের জমিতে ৩ ফসল ও ৩ ফসলের জমিতে ৪ ফসল ফলানোর কালকৌশল ও প্রযুক্তি প্রদান করছি।”