রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চুল কর্তন: সাক্ষ্য গ্রহণ তদন্ত কমিটির

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় অন্তত ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে তদন্ত কমিটি।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 07:54 PM
Updated : 4 Oct 2021, 07:54 PM

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী, ওই বিভাগের শিক্ষক, অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা সোমবার সাক্ষ্য দেন তদন্ত কমিটির কাছে।

কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌসী হিমেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদাভাবে সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী প্রশাসনিক ভবনের সেমিনার কক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় কমিটির সদস্য সচিবসহ তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। 

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ভুক্তভোগী ১৪ শিক্ষার্থী, ওই দিন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩০ শিক্ষার্থী, অন্য বিভাগের ছয় জন শিক্ষার্থী, ওই বিভাগের পাঁচ জন শিক্ষক, দুই জন কর্মচারী ও এক জন ক্লিনার কমিটির সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

লায়লা ফেরদৌসী বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের সময় শুধু চুল কাটার ঘটনা নয়, গত তিন বছরে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের দ্বারা বিভিন্নভাবে হওয়া ‘নির্যাতনের চিত্রও’ তুলে ধরেন তার বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।    

সাক্ষ্য প্রদানের জন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি।

তবে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থতার কথা জানিয়ে সময়ের আবেদন করে ই-মেইল করলেও অসুস্থতার বিষয়ে আবেদনের সাথে কোনো চিকিৎসা সনদ যুক্ত করেননি বলেও জানান তদন্ত কমিটির সভাপতি।

লায়লা ফেরদৌসী আরও বলেন, “প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে আজই [সোমবার] কমিটির বৈঠক করে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।    

এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সোমবার কোনো কর্মসুচি পালন করেননি। তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন।    

এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ১ম বর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নোমান সিদ্দিকী শান্ত বলেন, দীর্ঘ ৭/৮ দিন টানা আন্দোলন কর্মসূচি পালনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে অসুস্থ, যে কারণে সোমবার কোনো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না।

“আমরা কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে যদি আমাদের চাহিদার প্রতিফলন না ঘটে তাহলে আবার লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম বর্ষের পরীক্ষা হলে প্রবেশের সময় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। চুল কেটে দেওয়ায় অপমান সহ্য করতে না পেরে একজন অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তারা ক্লাস ও সকল পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ অবস্থায় চুল কাটার একটি সিসি টিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়। লাগাতার আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারের পর সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ অবস্থায় ২ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলন শিথিল করেন। তবে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।