যমুনার পানির স্তর ‘কমছে ক্রমাগত’

প্রতিনিয়ত যমুনার পানি কমে আসছে বলে সরকারের এক জরিপের বরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 04:14 PM
Updated : 4 Oct 2021, 04:14 PM

এভাবে চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চলে মরুকরণের শঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। এ থেকে রেহাই পেতে যমুনার তলদেশে খননের বিকল্প নেই বলেও জানান তারা। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং-আইডব্লিউএম এর গত ৩০ বছরের জরিপে পাওয়া তথ্যে এই শঙ্কার কথা উঠে আসে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, শুস্ক মৌমুমে পানি না পাওয়া গেলে এমন একদিন আসবে যখন উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

আইডাব্লিউএম জরিপে গত ৩০ বছরের মধ্যে শেষ ১০ বছরে পানির স্তর সবচেয়ে নিম্ন অবস্থানে ছিল বলে তিনি জানান।

ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং-আইডব্লিউএম একটি সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যার পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আইডব্লিউএম গত  ৩০ বছর ধরে যমুনার পানির স্তর পরিমাপ করে আসছে। প্রতি বছরই শীতকালে পানির প্রবাহ কমে আসছে।

প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, ২০১০ সালে এই নদীর পানির স্তরের উচ্চতা ছিল ৯.৬৭ মিটার। ২০২০ সালে শীত মৌসুমে তা দাঁড়িয়েছে ৯.৪১ মিটারে। ২০১১ ও ২০১২ সালে পানির স্তর বেড়ে ৯.৭৯ ও ৯.৭২ মিটার হলেও ২০১৭ সালে ৯.১৩ এবং ২০১৫ সালে ৯.৩৩ মিটারে নেমে আসে।

১৯৮৮ সালে শীতকালে যমুনার সর্বনিম্ন পানির স্তরের উচ্চতা ১০.৮৫ মিটার ছিল বলে তিনি জানান।

বগুড়ার বৈশাখী গ্রাম এখন যমুনাগর্ভে বিলীন হয়েছে। এই গ্রামের লোকজন এখন নানা স্থানে বসতি করেছেন। এমন একজন হলেন আনিছ মন্ডল।  

আনিছ মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শীতকালেও যমুনায় স্রোত থাকত। অনেক পানি থাকত। মাছও পাওয়া যেত। বন্যা ফসলের ক্ষতি হলেও পলি মাটি পড়ত। ফসল হতো অনেক। কোনো সার দেয়া লাগত না। এখন চরগুলোতে বালু আর বালু।”

কাজিপুর উপজেলার শানবান্ধা চরের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল খালেক সরকার বলেন, “আগে ফাল্গুন, চৈত্র মাসে যমুনায় যে পানি থাকত এখন তা নেই। ওই সময় এত তাপও ছিল না। এখন যমুনায় পানি কমে যাওয়ায় তাপও বেড়ে গেছে। চরের মানুষ চৈত্র মাসে মরুভূমির আবহাওয়ায় থাকে। পানি কমে যাওয়ায় মাছও আগের মতো নেই।”

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, যমুনার পানি প্রবাহের ৯৩ শতাংশ উজান থেকে আসে। বাকি ৭ শতাংশ আসে দেশের পানি প্রবাহ থেকে।

“উজানের বিভিন্ন জায়গায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়া, যমুনা ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনে যমুনায় দিন দিন পানি কমে যাচ্ছে। ফলে শীতকালে পানির লেভেলও [স্তর] নেমে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, বিগত কোনো বছরই এবারের মতো যমুনায় বর্ষাকালে এত কম পানি দেখা যায়নি। গত বছর কয়েক দফা বন্যা হয়। সেখানে পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এবার একবার বন্যা হয়েছে; তাতে পানির স্তর ছিল বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর।

“বর্ষায় পানি কম হলে ও নদীর গভীরতা না থাকলে শীতকালে কীভাবে পানি ধারণ করবে যমুনা?”

হুমায়ুন কবির বলেন, “কুড়িগ্রাম থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র বললেও আমরা কুড়িগ্রাম জেলার নুন খাওয়া হয়ে রংপুরের কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বগুড়া থেকে পাবনার বেড়া পর্যন্ত ২৭৬ কিলোমিটার যমুনা হিসেবেই ধরি।”

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “জরিপে দেখা গেছে প্রতি বছরই শুকনো মৌসুমে যমুনার পানি কমে আসছে। এক সময় এই লেভেল শূন্য কোঠায় এলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিত পরিণত হবে।”

তিনি বলেন, যমুনার তলদেশ এখন ভরাট। তাই পানি চলে যাচ্ছে। আগের মতো পলি আসছে না; শুধু বালি। যমুনায় শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখতে খননের বিকল্প নেই; এটাই জরুরি। যমুনার মূল ধারায় খনন করতে হবে তাছাড়া বিপর্যয় ঘটবে পরিবেশেরও।