টানা বর্ষণে পানিবন্দি রংপুর নগরী

টানা ভারি বর্ষণে রংপুর নগরীর রাস্তাঘাট, অলিগলিসহ বহু বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 03:08 PM
Updated : 4 Oct 2021, 03:08 PM

গত দুদিন ধরে অব্যাহত ভারি বৃষ্টিতে নগরীর জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ নেমে আসে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুরে ২৬৫ মিলিমিটার। শুধু রাতের ৭ ঘণ্টায় জেলায় ২২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের মতো শহরের নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থই থই করছে। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর সমান পানি। নগরীর আদর্শপাড়া, কামারপাড়া, বাবুখাঁ, নগর মীরগঞ্জ, হোসেন বাজার, সর্দারপাড়া, মাষ্টারপাড়া, ঈদগাহপাড়া কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, মুলাটোল, মুন্সিপাড়া, খলিফাপাড়াসহ অন্তত ৫০টির মতো পাড়া-মহল্লায় বৃষ্টির পানি আটকে আছে। এতে ওইসব এলাকায় হাঁটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনও কিছু কিছু এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে।

রাস্তাঘাট-দোকানপাট ও ঘরে পানি ওঠায় মানুষের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি সারাদিন।

নগরবাসীর অভিযোগ, শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ১৬ কিলোমিটারের শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল ঠিকমতো ড্রেজিং না করাসহ অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

নগরীর লালবাগ এলাকার আতিক-উল-আলম কল্লোল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বাড়ির পিছনে পানি জমাট বেঁধে আছে; বাইরে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই; আর একটু হলে বাসার ভিতর পানি ঢুকে পড়বে।”

মুন্সিপাড়ার অপু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তার বাড়ি সংলগ্ন শ্যামা সুন্দরী এখন পানিতে টইটুম্বর। বৃষ্টির পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই অবস্থা তার বাড়ির আশপাশের অনেকের।

বাবুঁখা এলাকার বাবু মিয়া বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য এখনও পর্যাপ্ত ড্রেন তৈরি হয়নি। পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট খালগুলো ভরাট হওয়া, আর দখলদারিত্বের কবলে পড়ায় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ির আশপাশসহ নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরকম বৃষ্টি তো গত বছরও হয়েছিল। তবে গত বছরে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ক্যানেল পরিষ্কার থাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় পানি উঠেছে তা নিচু এলাকা।”

পানিবন্দি মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিনে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবার মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণও হতে পারে।