মহিবুল্লাহ হত্যায় এক রোহিঙ্গা আটক

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটকের কথা জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2021, 08:04 AM
Updated : 1 Oct 2021, 08:04 AM

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নইমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পের এপিবিএন সদস্যরা ওই রোহিঙ্গাকে আটক করে।

তাৎক্ষণিকভাবে আটক ব্যক্তির নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে নইমুল হক জানিয়েছেন।

৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বুধবার রাতে লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেনিভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে উখিয়ার লম্বাশিয়াসহ আশপাশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিবারের সন্দেহ, রোহিঙ্গাদের আরেকটি সংগঠন আরসার সদস্যরা তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। 

মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাতে উখিয়ার ১-ইস্ট নম্বর লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্থানীয় মসজিদে দুই ভাই মিলে নামাজ পড়েন তারা। এরপর মুহিবুল্লাহসহ তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস অফিসে যান। সেখানে তিনি (মুহিবুল্লাহ) কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন।

পরে হাবিবুল্লাহ রাতের খাবার খেতে ঘরে চলে যান। খাওয়ার মধ্যেই গুলির শব্দ শুনে এআরএসপিএইচআর অফিসে ছুটে গিয়ে ভাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। সে সময় ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী লোক তাকে ঘিরে ছিল।

“রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে মুখে মাস্ক ও গামছা পরিহিত ওই অস্ত্রধারীরা হামলা চালায়।”

মুখঢাকা হলেও হামলাকারী কয়েকজনকে চিনতে পারার দাবি করে হাবিবুল্লাহ বলেন, “আরসার নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম, লালু ও মুর্শিদসহ ৩/৪ জনকে চিনতে পেরেছি। এরা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে আসছে। অন্যদের চিনতে পারিনি।”

হামলার কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে হাবিবুল্লাহ বলেন, “সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমেরিকা ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সাথে বাংলাদেশের ইতিবাচক আলালোচনা হয়েছে।

“আমার ভাই মুহিবুল্লাহ দ্রুত প্রত্যাবাসন নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন। কাল রাতে এ নিয়েই এআরএসপিএইচআর অফিসে বসে অন্য রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি।”

মুহিবুল্লাহর আরেক ভাই আহমদ উল্লাহ বলেন, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের সর্বজনগ্রাহ্য নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার সঙ্গে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের যোগাযোগ ছিল। এ কারণে পুরনো সংগঠন আরসা তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল।

“তারা (আরসার সদস্যরা) আমার ভাই মুহিবুল্লাহকে নেতা মানতে রাজি ছিল না। তারাই (আরসা) প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার ভাইকে খুন করেছে। এর আগে থেকে প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ না করতে আরসা’র সদস্যরা আমার ভাইকে নানাভাবে হুমকী দিয়ে আসছিল।”

ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানান নিহত রোহিঙ্গা নেতার এ ছোট ভাই।

পুরনো খবর