রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: চুল কাটার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষক ফারহানা বাতেন

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 06:57 PM
Updated : 30 Sept 2021, 07:26 PM

বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের পরীক্ষা এবং অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তদন্ত কমিটির কাজ চলবে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাময়িক বরখাস্ত ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দা নওয়াবা জাহাদ এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই ক্যামেরার ভিডিও তাদের হাতে এসেছে।

“ফুটেজে কাঁচি হাতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার সত্যতা মিলেছে। আমরা তদন্ত কমিটির সদস্যরা মিলে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি।… আশা করছি আগামীকালের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।”

এদিকে ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।  

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক ডলফিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্থায়ী অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছি। অথচ সাময়িক বরখাস্ত করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করাটা একটা যড়যন্ত্র মনে হচ্ছে। আমরা এখনও প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন করছি। আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

এ দাবিতে বুধবার থেকে অনশন চালিয়ে আসা ১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ডলফিন।    

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফারহানা বাতেন সম্প্রতি ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখায় ছাত্রদের বকাঝকা করেন। গত রোববার পরীক্ষার হলের দরজার সামনে তিনি কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কক্ষে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের খানিকটা তিনি কেটে দেন।

সেই শিক্ষার্থীদের একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন, যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। 

বুধবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “একজনেরও চুল কাটিনি। কারও চুলে হাতও দিইনি। এরকম ঘটনা ঘটছে কি না, এই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নাই। সোমবার সকালেও তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর কিছুদিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। ২০১৮ সালে যোগ দেন রাষ্ট্রায়ত্ত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফারহানা বাতেন বলেন, “২০১৯ সালেও একবার বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা হয়েছিল। তখন আমি শিক্ষকদের পক্ষে ছাত্রদের বিরুদ্ধে একটা রিট করেছিলাম। এখন সেই সব ছাত্ররাই আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মূলতঃ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন করছে, যার সঙ্গে যুক্ত করিয়েছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের।”

“এখানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতি থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছি। কারণ একের পর এক এই যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে….।”