রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: চুল কাটার ‘প্রমাণ পেয়েছে’ তদন্ত কমিটি, শিক্ষার্থীরা অনশনে

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 08:35 AM
Updated : 27 Dec 2021, 08:00 AM

এদিকে ওই ঘটনায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মত অনশনে চালিয়ে যাচ্ছেন একদল শিক্ষার্থী।

ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি নিজেই কাঁচি হাতে ১৬ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগে ওঠে। সেই শিক্ষার্থীদের একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন, যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। 

তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। ফুটেজে কাঁচি হাতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার সত্যতা মিলেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটির সদস্যরা মিলে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। আজও বৈঠক করব। আশা করছি আগামীকালের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।”

এক প্রশ্নের উত্তরে লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদেরও সে বিষয়ে জানানো হবে। সিসি ক্যামেরার সেই ভিডিও তারা প্রকাশ করতে চান, যাতে স্বচ্ছ্তা থাকে। 

এ তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়েল আইন কর্মকর্তা খান মো. আরমান শোভন। আর সদস্য হিসেবে আছেন অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান বরুণ চন্দ্র রায়, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান এবং সংগীত বিভাগের প্রভাষক ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য রওশন আলম।

ফারহানা ইয়াসমিন প্রশাসনিক পদ ছাড়লেও তাকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার তারা প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তাদের আন্দোলনের কারণে পরীক্ষাও হচ্ছে না।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবারও তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে আছেন। 

এদিকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন তারা।

অনশনে অংশ নেওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নোমান সিদ্দিকী শান্ত বলেন, “আমরা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। এ কারণে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের অনশন ও আন্দোলন চলবে। 

যে ১৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব ও মাজেদুল ইসলাম নামে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসা নিয়ে এসে তারা আবারও অনশনে ফিরেছেন।

‘চুল কেটে দেওয়ায় অপমান সইতে না পেরে’ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের যে শিক্ষার্থী ঘুমের বড়ি খেয়ে সোমবার রাতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বুধবার রাতে তিনি ছাত্রাবাসে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠী তানভীর হোসেন। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফারহানা বাতেন সম্প্রতি ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখায় ছাত্রদের বকাঝকা করেন। গত রোববার পরীক্ষার হলের দরজার সামনে তিনি কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কক্ষে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের খানিকটা তিনি কেটে দেন।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফারহানা বুধবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার কাছে পুরো ব্যাপারটি শুনে অবাক লেগেছে। আমি পত্রিকায় দেখেছি খবরটা।

“১৬ জন মানুষের চুল কেটে দেব, কেউ দেখবে না? তারা কোনো ছবি তুলবে না? আমি কাটতে চাইলাম আর ১৬ জন আমাকে চুল কাটতে দিল, কেউ কোনো প্রতিবাদ করবে না?”

ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন।

একজন ছাত্রেরও চুল কি কেটেছিলেন?- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “নাহ, একজনেরও চুল কাটিনি। কারও চুলে হাতও দিইনি। এরকম ঘটনা ঘটছে কি না, এই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নাই। সোমবার সকালেও তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর কিছুদিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। ২০১৮ সালে যোগ দেন রাষ্ট্রায়ত্ত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফারহানা বাতেন বলেন, “কিছু দলাদলি তো থাকেই। তবে সে কারণে হয়েছে কি না, তাও বুঝতে পারছি না।

“২০১৯ সালেও একবার বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা হয়েছিল। তখন আমি শিক্ষকদের পক্ষে ছাত্রদের বিরুদ্ধে লিড করেছিলাম। এখন সেই সব ছাত্ররাই আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মূলতঃ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন করছে, যার সঙ্গে যুক্ত করিয়েছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের।”

“এখানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছি। কারণ একের পর এক এই যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে….।”