চলন্ত ট্রেনে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা ‘ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায়’: র‌্যাব

ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে দুজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2021, 09:22 AM
Updated : 26 Sept 2021, 09:43 AM

র‌্যাব বলছে, ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হল- নগরীর শিকারী কান্দা এলাকার আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬), বাঘমারা এলাকার মঞ্জুর মিয়ার ছেলে মাকসুদুর হক রিশাদ (২৮), সাব্বির খানের ছেলে মো. হাসান (২২), মৃত আশরাফ আলীর ছেলে রুবেল মিয়া (৩১) ও সাব্বির খানের ছেলে মোহাম্মদ (২৫)।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১৪ এর অধিনায়ক মো. রোকনুজ্জামান জানান, আগের রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ছাদে গফরগাঁও স্টেশনে কয়েকজন ডাকাত উঠে।

এ সময় ছাদে থাকা তিন যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইলসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সময় বাধা দিলে ডাকাতরা তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে।

পরে ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে ঢোকার আগেই কেওয়াটখালী ও ভারব্রিজের কাছে মোবাইল ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে ডাকাতরা নেমে পড়ে। ট্রেনটি জামালপুর পৌঁছানোর পর তিনজনকে ছাদ থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিসকেরা দুইজনকে মৃত ঘোষণা করে।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি মিতালী বাজার এলাকার ওয়াহেদ মিয়ার ছেলে নাহিদ মিয়া (৪০) ও একই জেলার পৌরশহরের বাগেরহাটা এলাকার মো. আজারুল মিয়ার ছেলে সাগর মিয়া (২৫)।

নাহিদ ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন এবং সাগর ঢাকায় রিকশা চালাত।

সংবাদ সম্মেলনে রোকনুজ্জামান বলেন, ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্বাধীনকে নগরীর শিকারীকান্দা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে কাছ লুট করা মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

পরে তার দে্ওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের বরাতে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চারজন ডাকাত ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ওঠেন। পরে রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়।

ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ ও তার একজন সহযোগী যোগ দেয়। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগির ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে।

ডাকাতির এক পর্যায়ে সাগর ও নাহিদ বাধা দিলে ডাকাতদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাথারী কুপিয়ে আহত করে।

পরে সাগর ও নাহিদ ট্রেনের ছাদে অচেতন হয়ে পড়লে ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢোকার আগে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন থেকে নেমে যায়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানিয়েছে যে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার কমলাপুর এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন ও গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশনে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছিল।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নে্ওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

এদিকে শুক্রবার রাতে ছুরিকাঘাতে নিহত সাগরের মা হনুফা খাতুন বাদী হয়ে ময়মনসিংহ জিআরপি থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৮/১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন বলে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান।