এএসআই পিয়ারুল রেখে যান দুই অবুঝ শিশু

রংপুরে ‘মাদক কারবারির’ ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশের এএসআই পিয়ারুল ইসলামের কুড়িগ্রামের বাড়িতে এখন শোকার্ত মানুষের ভিড়।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2021, 06:33 PM
Updated : 25 Sept 2021, 06:33 PM

তার বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন শোকার্ত স্বজন-প্রতিবেশীরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় পিয়ারুলের মরদেহ বাড়িতে নেওয়া হলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাকে এক নজর দেখতে এলাকাবাসী তাদের বাড়িতে ভিড় জমান।

পিয়ারুলের মৃত্যুর খবরের পর থেকে বাবা-মা ও স্ত্রী হাবিবা খাতুন হেনা বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন। লাশের পাশে বসেই অবুঝ শিশু দুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে।

আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও এলাকাবাসীরা শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

শুক্রবার দায়িত্ব পালনকালে এক ‘মাদক কারবারির’ ছুরিকাঘাতে তিনি আহত হন; শনিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

পিয়ারুল ইসলাম হারাগাছ থানায় দায়িত্বে ছিলেন। কুড়িগ্রাম রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মৌলাপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তার স্ত্রী ও দুই সস্তান রয়েছে। তিনি ২০১২ সালে পুলিশে যোগদান করেন।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য খোরশেদ আলম জানান, পিয়ারুল ইসলামের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবারসহ এলাকাবাসী। তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। তার বাবা আব্দুর রহমান মিন্টু চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

পিয়ারুল ইসলাম দীর্ঘ একযুগ ধরে পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতায় হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন। তার দুই ছেলে রয়েছে। প্রথমটির বয়স সাত বছর এবং দ্বিতীয়টির বয়স দেড় বছর।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার ওসি রাজু সরকার বলেন, পিয়ারুল ইসলামের প্রথম জানাজা নামাজ রংপুর পুলিশ লাইন মাঠে বিকাল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজা রাত ৯টায় তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে চন্দ্রপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।

পিয়ারুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহমান মিন্টু বলেন, “আমার সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে সে। এজন্য আমি গর্ব অনুভব করি।”

হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে রংপুরের হারাগাছে দায়িত্ব পালনকালে সাহেবগঞ্জ এলাকায় গাঁজাসহ পারভেজ হাসান পলাশ নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করেন তিনি। এসময় পলাশ ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত অবস্থায় পিয়ারুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ ডা. জামাল উদ্দিন জানান, রাতে অস্ত্রোপচার শেষে আইসিইউতে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় শনিবার সকাল ১১টার দিকে তিনি মারা যান।