বরগুনা-ঢাকা নৌ-রুটে ডুবোচর, বিঘ্নিত লঞ্চ চলাচল

ঢাকা-বরগুনা নৌ-রুটে অগণিত ডুবোচরের কারণে লঞ্চ চলাচল ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

মনির হোসেন কামাল বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 12:54 PM
Updated : 22 Sept 2021, 12:54 PM

এতে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তেমনি রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

চলতি মাসের প্রথম দিকে বিষখালী নদীর ডুবোচরে চারশ যাত্রীসহ আটকা পড়েছিল ঢাকা-বরগুনা নৌ-রুটের লঞ্চ এমভি পূবালী-১। পরে আরেকটি লঞ্চে তুলে যাত্রীদের বরগুনা নিয়ে আসা হয়। সপ্তাহখানেক পর লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া এক মাস আগে এই চরে আরেকটি লঞ্চ আটকা পড়েছিল। সেটি উদ্ধারে সময় লেগেছে ১৫ দিন।

পরপর দুটি দুর্ঘটনায় এই নৌ-পথে লঞ্চে চলাচলকারীরা দুর্ঘটনা শঙ্কায় আছেন। 

দুর্ঘটনাকবলিত এমভি পূবালী-১ এর সুকানি ও মাস্টারদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে সংকেত বাতির ব্যবস্থা করেনি।

এ কারণে তারা লঞ্চ চালাতে ভয় পাচ্ছেন বলেও জানান।

লঞ্চটির সুকানি সেন্টু হাওলাদার বলেন, অতি সতর্কতার সঙ্গে এই রুটে লঞ্চ চালাতে হয়। বিষখালী নদীর ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়ন এলাকা খুবই ভয়াবহ। এখানে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। কোনোরকম মোড় ঘুরতে গেলেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

“সম্প্রতি বিষখালীর চরপালট অংশে ডুবোচরে লঞ্চটির ধাক্কা লাগে। এতে লঞ্চের ৯৮ ভাগ অংশ চরে উঠে যায়।”

লঞ্চে কর্মরত আরেক সুকানি নাসির শেখ বলেন, ঢাকা থেকে প্রায় ৪শ যাত্রী নিয়ে বরগুনা যাওয়ার পথে বিআইডব্লিউটিএ-এর কোনো বয়াবাতি বা মার্কিং (নাব্যতা সংকেত) না থাকায় অতি সতর্কতার সঙ্গে সামনে এগুতে হচ্ছিল।

“ওই রাতে প্রচুর বৃষ্টি ছিল, জোয়ারের পানিও ছিল বেশি। এ কারণে চরটির নিশানা বোঝা যাচ্ছিল না। মোড় ঘোরার সময় লঞ্চটি চরের ওপরে উঠে যায়।”

পরে রাজারহাট-বি নামের আরেকটি লঞ্চ গিয়ে পূবালীতে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করে বরগুনায় পৌঁছে দেয় বলে জানান তিনি।

পূবালী লঞ্চের মাস্টার জহিরুল ইসলাম বলেন, বরিশালের পর বরগুনা পর্যন্ত ঝালকাঠির গাবখান মোহনা ছাড়া আর কোথাও নৌ-সংকেত নেই। ভরা মৌসুমে এ রুটে লঞ্চ চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিআইডব্লিউটিএও নৌ সঙ্কেতের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

চরে আটকে যাওয়া পূবালী-১ লঞ্চটি চর থেকে নামানোর বিষয়ে লঞ্চের মালিক ইমরান খান রাসেল বলেন, চর থেকে লঞ্চ নামানো খুবই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়।

“দুর্ঘটনার পরপরই আমরা বরিশাল নদীবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এখানে দ্রুত মার্কিং (নাব্যতা সংকেত) স্থাপনের দাবি জানিয়েছি।”

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ চালকরা তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, বিষখালী নদীর ওখানে সিগন্যাল বাতি না থাকায় তাদের লঞ্চ চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

পরিবেশ আন্দোলন, বরগুনার সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ বলেন, সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনার বুক দিয়ে বহমান খাকদোন, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক ডুবোচরের কারণে তিনটি নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ, কার্গো, মাছধরা ট্রলার ও সমুদ্রগামী জাহাজ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

“নাব্যতা সংকট কাটানোর জন্য কালেভদ্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করলেও খননকৃত বালু পুনরায় নদীতে ফেলায় পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে চরম ঝুঁকি ও অতিরিক্ত সময় ব্যয়ে নৌ-চলাচল করছে।”

এ কারণে বরগুনা থেকে রাজধানীসহ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে তিনি জানান।