‘চায়না দুয়ারি’ ফাঁদে ব্যাপক হারে মাছ নিধন

‘চায়না দুয়ারি’ নামের এক ধরনের ফাঁদ পেতে মাছ নদী-খাল-বিলে ব্যাপক হারে ছোট-বড় মাছ শিকার করছে জেলেরা।

শেখ মফিজুর রহমান শিপন ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2021, 05:51 PM
Updated : 21 Sept 2021, 05:51 PM

গত কয়েক বছর ধরে ফরিদপুরের বিভিন্ন জলাশয়ে এই ফাঁদ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের বিলুপ্তির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভুজ আকৃতির কাঠোমোর চারপাশে ‘চায়না জাল’ দিয়ে ঘিরে এই ফাঁদ তৈরি করা। ক্ষেত্রভেদে ‘চায়না দুয়ারি’ ৫২ হাত আবার ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়।

এই ফাঁদ দিয়ে ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, ভূবনেশ্বর, কুমার নদ-নদীসহ বিভিন্ন বিল-বাওরে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির জেলে।

সরেজমিনে ফরিদপুরের সদর উপজেলার ডিক্রীরচর, নর্থচ্যানেল, চরমাধবদিয়ায় বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা বিক্রি করতে দেখা গেছে; যেগুলো ‘চায়না দুয়ারি’ দিয়ে ধরা বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

স্থানীয়রা জানান, এই ফাঁদ বসালে নদীর পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়; এর জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট-বড় কোনো মাছ বের হওয়ার সুযোগ পায় না।

ডিক্রীরচর ইউনিয়নের নমোডাঙ্গীর মোজাফর নামের এক মাছ শিকারি বলেন, চায়না দুয়ারি নদীর তলদেশে বসানো হয়। উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যেকোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার মাছ ঢুকে পড়লে বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।

সদরপুরের চন্দ্রপাড়ার ভুবেন্বশ্বর নদীর মাছ শিকারি হাবিব মোল্লা বলেন, নদীতে যে জায়গায় এই ফাঁদ পাতা হয় ওপর থেকে তার চিহ্ন রাখতে বাঁশের খুঁটি গাড়া হয় যা দেখে সহজে বোঝা যায় সেখানে চায়না দুয়ারি পাতা হয়েছে।

দিনে দুই বার সকাল ও বিকালে ফাঁদগুলো তোলা হয় বলে তিনি জানান।

জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা নদীতে মাছ ধরে এমন কয়েক জন জেলে বলেন, প্রকার ভেদে চায়না দুয়ারির দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তবে আগে একটু কম ছিল। প্রশাসনের তৎপরতার কারণে এখন একটু বেশি দামে কিনতে হয়।

চরভদ্রাসন উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্লা বলেন, “বাজারের দেশীয় মাছে পোনা দেখে মনটা খারাপ হয়। নিষিদ্ধ এই ফাঁদ ব্যবহারকারীদের ধরতে আমরা স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে ওই মাছের বংশ ধ্বংশের ফাঁদ অধিক মূল্যে বিক্রয় করে।”

ফরিদপুর শহরের ব্যবাসয়ী ও সংবাদকর্মী সনজীব দাস বলেন, “এই বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর পাড়ে সকালে মাছ কিনতে গেলে দেখা যায় দেশীয় সুস্বাদু লিটা মাছের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাছগুলো এক দেড় মাস পানিতে থাকতে পারলে বেশ বড় হতো।”

তিনি বলেন, “এই ‘চায়না দুয়ারি’ এসে আমাদের দেশীয় মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন দেশীয় মাছ আমরা সহজে পাব না।”

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “‘চায়না দুয়ারি’ আমাদের দেশীয় জাতের মাছ ধ্বংস করছে। ব্যাপক হারে এই ফাঁদ ব্যবহার করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

“এই ফাঁদ প্রতিরোধ করতে এবং জেলেদের নিরুসাহিত করতে আমরা জেলার সকল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি।”

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জেলায় বেশ কয়েকটি বাজারের ‘চায়না দুয়ারি’ জব্দ করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।