জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, চলতি বছর ২১ অগাস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনের।
সারা জেলায় এবার ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এর ফলে রোপা আমনের ২ হাজার ৭৯৬ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
জলমগ্ন হওয়া ১ হাজার ১৯৫ হেক্টর সবজির মধ্যে ৬১ হেক্টর শাক-সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে ৬৭ হেক্টর বীজতলা পঁচে সম্পূর্ণ চাষের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে বন্যায় শুধুমাত্র কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পাশাপাশি এতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৯ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে এ কৃষি কর্মকর্তা জানান।
মঞ্জুরুল জানান, বন্যায় সদরে ৭৯২ হেক্টর, চিলমারীতে ৫১৪ হেক্টর, নাগেশ্বরীতে ৪৯৫ হেক্টর, উলিপুরে ৩৯৮ হেক্টর, রৌমারীতে ৩০৮ হেক্টর, চররাজিবপুরে ১৬২ হেক্টর, ফুলবাড়ীতে ১২৫ হেক্টর, ভুরুঙ্গামারীতে ১২০ হেক্টর ও রাজারহাটে ১০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, “বন্যায় কৃষকদের একটা আগাম প্রস্তুতি থাকে। পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। চর এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা স্থানীয় জাতের ধান ছিটিয়ে নতুন করে বপন শুরু করেছে।
এতে করে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বন্যায় পুকুর তলিয়ে মৎস বিভাগের ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং ২২৬ জন মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান।
কালিপদ বলেন, “চলতি বন্যায় ৪৪ দশমিক ৬০ হেক্টর আয়তনের ২৯১টি পুকুর প্লাবিত হয়ে ৬৪ দশমিক ৬০ মেট্রিকটন মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৬২ জন মাছচাষি। টাকার অংকে মোট ক্ষতি হয়েছে ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ডুবে গেছে ২৯১টি পুকুর।”
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানান, এবারের বন্যায় গো-চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশুর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীতে এই ক্ষতি বেশি হয়েছে।
সরকার ক্ষতির দিকটি বিবেচনা করে ৩১ লাখ ৪২ হাজার টাকার গো-খাদ্য প্রণোদনা দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য এখন পর্যন্ত ৩৭০ মেট্রিকটন চাল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান।