দুই সন্তানকে এসপি অফিসের সামনে রেখে গেলেন মা

ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয় বহন না করার অভিযোগে ঝালকাঠিতে ১৬ মাস বয়সী জমজ দুই ছেলেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে গেছেন এক পুলিশ সদস্যের সাবেক স্ত্রী।

ঝালকাঠি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2021, 07:11 PM
Updated : 20 Sept 2021, 07:54 AM

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এই নারী শিশুদের এসপি অফিসের চেক পোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

শিশু দুটিকে ঝালকাঠি থানার নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়েছে।

শিশু দুটির মা সুমাইয়া আক্তার সাংবাদিকদের জানান, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন জেলার কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে।

২০১৯ সালের মে মাসে ঝালকাঠি সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে কনস্টেবল ইমরানের বিয়ে হয়।

সুমাইয়া বলেন, দাম্পত্য কলহের জেরে এ বছরের মার্চ মাসে স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান ইমরান। তালাক নোটিশ পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে তিনি যৌতুক মামলা করেছেন।

তালাক নোটিশ পাঠানোর আগে থেকে ইমরান স্ত্রী সুমাইয়া এবং সন্তানদের ভরণপোষণ দিচ্ছেন না বলে সুমাইয়ার অভিযোগ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানি মাহফুজ মিয়া বলেন,  বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একজন নারী দুই শিশুকে এসপি অফিসের চেক পোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান।

“যাবার সময় সে বলে যায়- তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক।”

সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু দুটির কান্নায় থানার পারিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের এক নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরে জ্বর ছিল।

সুমাইয়া আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তার দুই ছেলে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোববার সকালে চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় ৬ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন।

তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু প্রধান ফটকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ সদস্য ভিতরে প্রবেশ করতে দেননি। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি। ওদের লালনপালন করতে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু খরচ চালানোর মত সংগতি আমার নেই।”

কনস্টেবল ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য তিন হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজ-খবর নেই। কিন্তু মা হয়ে সে কীভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল!”

ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা বিষয়টি দুই পরিবারের সাথে কথা বলে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুদের দাদা-দাদিকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে শিশু দুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”