বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নীলগাইয়ের ঘরে এল ২ শাবক

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নীলগাই জুটির দুইটি শাবকের জন্ম হয়েছে। তারা মাদি না পুরুষ তা এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2021, 07:34 PM
Updated : 17 Sept 2021, 07:37 PM

গত ১ অগাস্ট তাদের জন্ম হলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ এতদিন তা প্রকাশ করেনি।

এই দুই শাবকের নিরাপত্তা ও প্রকৃতিতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ থাকায় শুক্রবার [১৭ই সেপ্টেম্বর] বিকালে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়।

প্রায় ৮০ বছর আগে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া এই প্রাণী বিলুপ্তের তালিকায় স্থান পেয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া বর্ডার এলাকার বাসিন্দারা একটি নীল গাই ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নেয়। পরে বিজিবি-৫৩ (মামুদপুর বিওপির) সদস্যরা ওই মাদি নীলগাইটিকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে হস্তান্তর করে। পরে নীলগাইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে আনা হয়।

অপরদিকে, ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় আরেকটি নীলগাই ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল স্থানীয়রা। তা জানতে পেরে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ওই পুরুষ নীলগাইটি উদ্ধার করে।

পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে ২০১৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি প্রাণীটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয় বলে তবিবুর জানান।

পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মো. সারোয়ার হোসেন খান জানান, হেমন্তাকাল থেকে শীতকালের শুরুর দিকে নীলগাইয়ের প্রজনন সময়। গর্ভধারণকাল গড়ে ২৪৩ দিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যমজ বাচ্চা প্রসব করে, ক্ষেত্র বিশেষে এক থেকে তিনটি বাচ্চাও প্রসব করে থাকে। জন্মের ৪০ মিনিটের মধ্যে দাঁড়াতে পারে। পুরুষ শাবক ৩ বছর এবং মাদি ২ বছরে প্রজননক্ষম হয়। গড় আয়ু ২১ বছর।

তিনি আরও জানান, পুরুষ নীলগাইয়ের বর্ণ গাঢ় ধুসর, অনেকটা কালচে রঙের। অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ করা হয়েছে। শুধু পুরুষ নীলগাইয়ের কৌণিক, মসৃণ ও সামনের দিকে কিঞ্চিত বাকানো দুটি শিং আছে। পুরুষের উচ্চতা ৫২-৫৮ ইঞ্চি, শিংয়ের দৈর্ঘ্য ৮-১২ ইঞ্চি। মাদি নীলগাই এবং শাবকের রং লালচে বাদামী; কিন্তু খুরের উপরের লোম সাদা। ঠোঁট, থুঁতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নিচে সাদা। নীলগাই ছোট ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চড়ে বেড়াতে ভালবাসে। ঘন বন এড়িয়ে চলে। সচরাচর ৪ থেকে ১০ সদস্যের দল নিয়েই নীলগাই ঘুরে বেড়ায়। তবে কখনও কখনও ২০ বা তার বেশি সদস্যও দলে থাকতে পারে।

সারোয়ার হোসেন আরও বলেন, নীলগাই গাছে ঢাকা উঁচু-নিচু সমতলে বা তৃণভূমিতে যেমন স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে, তেমনি আবার শস্যক্ষেত্রে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করতে পটু। সকাল আর বিকেলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিনের বাকি সময়টা গাছের ছায়ায় বসে কাটায়। মহুয়া গাছের রসালো ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি ছাড়া এরা দীর্ঘসময় কাটিয়ে দেয়, এমনকি গরমের দিনেও এরা নিয়মিত পানি খায় না। আত্মরক্ষার প্রধান উপায় দৌড়ে পালানো। দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, এরা যখন এডাল্ট হয় তখন এদের দেহে কিছুটা বর্ণ দেখা যায়। এজন্য তাদেরকে নীল গাই বলা হয়। ৮০ বছর আগে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এক সময় অবাধ বিচরণ ছিল নীলগাইয়ের। ১৯৪০ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে নীলগাই দেখা গিয়েছিল। বনাঞ্চল উজাড় হওয়া, বসবাসের পরিবেশ হারানো, খাদ্য সংকট ও শিকারির অবাধ শিকারের কারণে পরিবেশে প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে কমতে এক সময় নাম ওঠে বিলুপ্তের তালিকায়।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ যুক্তরাষ্ট্রে নীলগাই রয়েছে বলে তিনি জানান।

পার্কে থাকা নীলগাই দুটি জুটি বাঁধার ১১ মাস ১১ দিন পর পহেলা অগাস্ট দুটি বাচ্চা জন্ম দেয়। বর্তমানে সবাই সুস্থ আছে। বাংলাদেশ নীলগাই শূন্য হলেও ভারতে লাখের উপর নীলগাই রয়েছে।