সাতগাঁও-সিন্দুরখান সড়কের ৬ কিলোমিটার ভোগান্তি

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও-সিন্দুরখান সড়কের ছয় কিলোমিটারের বেশি অংশ দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2021, 09:30 AM
Updated : 10 Sept 2021, 09:30 AM

উপজেলার আশিদ্রোনে, সিন্দুরখানে ও ভূনবীর ইউনিয়নের অংশে থাকা ওই সড়কটির সংষ্কার কাজ প্রায় দুই বছর আগে শুরু হলেও ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে’ তা এখনও শেষ হয়নি। সম্প্রতি রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে ভোগান্তি চরমে ঠেকেছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, ঢাকার ডলি কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ২ জুন রাস্তাটির কাজ সংষ্কার কাজ শুরু করে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চুক্তি থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বাকি রেখে হঠাৎ চলে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আছিদ উল্লাহ স্কুল চৌমুহনা থেকে সিন্ধুরখান মূখে প্রায় ৬ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার রাস্তা পুননির্মাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় খুঁড়ে রাখা হয়েছে। পুরো রাস্তায় ছড়ানো ছিঠানো রয়েছে কংক্রিট (ইটের টুকরো)।রাস্তার যত্রতত্র সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় গর্ত; সেখানে জমেছে বৃষ্টির পানি। পুরো রাস্তাই এখন খানাখন্দে ভরা।

অন্যদিকে এই রাস্তার অপর অংশ আছিদ উল্লাহ স্কুল চৌমুহনা থেকে শ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার-ঢাকা সড়ক পর্যন্ত বেশ কিছু যায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কোথাও রাস্তা ভেঙে পাশের নিচু জমির সঙ্গে মিশে গেছে।

দুর্ঘটনার ঝুঁকি, যানবাহনের ক্ষতি, সময় ও অর্থের ক্ষতি হলেও চলাচলের জন্য ভোগান্তি সহ্য করে এ রাস্ত দিয়ে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ।

আশিদোন ইউনিয়নের কাজির গাঁও এলাকার জুয়েল আহমেদ বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে  প্রতিদিন মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। সাইকেলের চাকা প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। আমি এই দুই বছরে তিন-চার বার সাইকেলের চাকা নতুন লাগিয়েছি।”

জামসী গ্রামের মুক্তার মিয়া বলেন, “এই রাস্তার দুরবস্থায় এখন তাদের ভোগান্তি চরমে। মোটর সাইকেলকে বাইসাইকেলের মতো করে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়; সময়ও লাগে দ্বিগুন। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।”

পূর্ব জামসী গ্রামের মো. শাহীন মিয়া জানান, রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার দুই বছর আগের থেকেই রাস্তা খারাপ ছিল। ভালোর জন্য কাজ শুরু হলেও এখন আরও খারাপ অবস্থা হয়েছে রাস্তাটির।

তিনি বলেন, “এই কংক্রিটের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। বিশেষ করে কোন রোগী নিয়ে গেলে রোগীর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। প্রায়ই ছোট যানগুলো এখানে গর্তে আটকে যায়।”

আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “এই রাস্তাটি অনেক বছর ধরেই খারাপ ছিল। মাঝখানে দুই বছর আগে দেখলাম রাস্তার সব পিচ তুলে নতুন করে কংক্রিট ফেলা হচ্ছে। কংক্রিট ফেলার পর সেটা সমান করার আগেই দেখলাম আর কেউ এখানে কাজ করতে আসে না।”

এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধণ জানান, একটা রাস্তার কাজ কাছাকাছি সময়ে বার বার করা যায়না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরুতেই নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করেছে। তাছাড়া তাদের কাজের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে তারা তদন্ত করে কাজ বন্ধ রাখেন এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন। এরপর নতুন টেন্ডারের জন্য একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ কেরা হয়েছে। এই রাস্তার জন্য তার ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

এ ব্যাপারে প্রকৌশলী মনিরুল বলেন, “রাস্তা মেরামতে দেরি করার কারণে ডলি কন্সট্রাকশনের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত এ রাস্তার জন্য নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে।”

সাতগাঁও-সিন্দুরখান সড়কটির ৬০ ভাগ অংশ আশিদ্রোন ইউনিয়নে, ২৫ ভাগ সিন্দুরখানে ও ১৫ ভাগ ভূনবীর ইউনিয়নে বলে জানান তিনি।