নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জানান, নাটোর আমলী আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এফ এম গোলজার রহমান বৃহস্পতিবার সুমি বেগমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সুমি (৩২) ঢাকায় কর্মরত অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক খন্দকার আতিকুর রহমানের স্ত্রী।
নাটোর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আমিনুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে সদর থানা থেকে শিশু আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সুমি বেগমকে কোর্টে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে ১৩ বছর বয়সী গৃহকর্মীকে প্রায় তিন বছর ধরে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সুমির পক্ষে কোনো আইনজীবী জামিনের আবেদন না করায় নাটোর আমলী আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান তিনি।
পরিদর্শক আব্দুল মতিন শিশুটির মায়ের বরাতে বলেন, সদর উপজেলার পাইকোরদোল গ্রামের ওই কিশোরীকে তার বাবা সংসারের অভাব অনটনের কারণে তিন বছর আগে পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে পাঠান। মাসিক ১২শ টাকা হারে প্রথম আট মাস মেয়েটির বাবার কাছে বেতন পাঠানো হলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর বার বার অনুরোধ করলেও মেয়েটিকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না সুমি।পরে ঘটনাটি থানায় জানানোর হুমকি দিলে বুধবার বিকালে সুমি ও তার মা দিলারা বেগম মেয়েটিকে নিয়ে পাইকোরদোল গ্রামে যান।
এ পুলিশ কমৃকর্তা বলেন, “বাবা মায়ের কাছে মেয়েটি জানায় যে, গত তিন বছর ধরে তাকে নানা অজুহাতে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। গরম স্ত্রির ছ্যাঁকা ও চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। শব্দ করে কাঁদলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হতো।”
পরে পাইকোরদোল গ্রামের লোকজন ঘটনাটি জানার পর বুধবার সন্ধ্যায় সুমি ও তার মাকে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে গ্রামবাসী তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে এ ঘটনায় সুমি বেগমের বিরুদ্ধে মেয়েটির মা থানায় মামলা করেন বলে আব্দুল মতিন জানান।
এ ব্যাপারে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার আতিকুর রহমান তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন; তাকে মা বলে ডাকতেন। তাকে মারপিটের করার কারণে তিনি তার স্ত্রীকে বকাঝকা করতেন। অধিকাংশ সময় তার অনুপস্থিতিতে মেয়েটির উপর নির্যাতন চালানো হতো।
এদিকে সুমি বেগম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়েটির শরীরে নির্যাতনের যে চিহ্ন রয়েছে, তা অনেক আগের। সে তখন অন্য বাসায় কাজ করতো। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। এ কারণে রেগে গিয়ে মাঝে মাঝে বকাঝকা করতেন। হয়তো সেই আক্রোশে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তারেক জুবায়ের বলেন, মেয়েটির মায়ের এজাহারের ভিত্তিতে শিশু আইনে মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।