মৌলভীবাজারে জলময়ূরের খোঁজে

মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে অনুসন্ধান চালিয়ে জলময়ূরের খোঁজ পেয়েছেন শৌখিন ফটোগ্রাফার খোকন থৌনাউজাম।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2021, 01:54 PM
Updated : 3 Sept 2021, 03:47 PM

এক সময় মৌলভীবাজারে পর্যাপ্ত জলময়ূরের দেখা মিললেও অনেক দিন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

থৌনাউজাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু দেখা নয়, হাইল হাওরের পদ্মবনে জলময়ূরের বংশ বিস্তারেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।”

শুক্রবার এমনই ছবি ধরা পড়ে তার ক্যামেরায়।

থৌনাউজাম বলেন, “আমার বাড়ি কাছেই হাইল হাওর। এক সময় এখানে প্রচুর জলময়ূর দেখা যেত। কিন্তু হাওর ও হাওরের অধিকাংশ বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায়, বাড়িঘর ও মাছের খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলায় হাওরটি নিঃশেষের পথে।
“দৃষ্টিনন্দন জলময়ূর এক সময় হাইল হাওরের সৌন্দর্য়ের আধার ছিল। কয়েক বছর ধরে মোটেই দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকি। বর্ষা এবং শুকনো মৌসুমে হাওরের এপার-ওপার পাড়ি দিয়েছি বহুবার। কিন্তু ব্যর্থ হযেছি। হাওরের মৎস্যজীবীদের জলময়ূরের ছবি দেখিয়ে এ জাতীয় পাখি দেখলে আমাকে খবর দিতে বলেছি।”
থৌনাউজাম বলেন, সপ্তাহ দুই আগে আমগীর হেগাসেন নামে একজন এলাকাবাসী ফোন করে জানান তিনি হাইল হাওরে জলময়ুরের বাসা ও চারটি ডিম দেখেছেন।

“আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেই। ডিমগুলোর দিকে নজর রাখতে বলি। বৃহস্পতিবার আলমগীর ফোন করে জানান বাসায় ডিম নেই। সঙ্গে সঙ্গে আমি বেরিয়ে পড়ি ক্যামেরা নিয়ে। হাওরের বাইক্কা বিলের পাশে যেখানে ডিম পেড়েছিল জলময়ূর, সেখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে আমি নৌকায় ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি। একসময় পদ্মপাতার ওপর আবিষ্কার করি জলময়ূরের ছানাদের। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা পাই পুরুষ জলময়ূরের। শুক্রবার সকালে আমি আবার হাওরে যাই। এ সময় দেখা পাই মা জলময়ূরের।”

এলাকা ভেদে একে নেউ, নেউপিপি, পদ্মপিপি বা মেওয়া নামেও ডাকা হয় বলে জানান থৌনাউজাম।

পাখিটির লেজ লম্বা। মাথা, গলা ও ডানার পালক সাদা। ঘাড় সোনালি-হলুদ, পিঠ গাঢ় বাদামি, বুক-পেট কালচে-বাদামি ও লেজ কালচে।

শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সংরক্ষক সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, পাখিটির লেজসহ দেহের দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির ওজন ১১৩ থেকে ১৩৫ গ্রাম। স্ত্রী প্রজাতির ওজন ২০৫ থেকে ২৬০ গ্রাম হয়। এরা ভাসমান পাতার ওপর হেঁটে হেঁটে জলজ উদ্ভিদ থেকে পোকা ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী, জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, অঙ্কুর ও বীজ খায়। জলময়ূর হাওর, বিল, হ্রদ ও মিঠাপানির জলাভূমিতে বাস করে। বর্তমানে এর অবস্থা প্রায় সংকটাপন্ন।
তিনি বলেন, “হাইল হাওরে বহুবার এ পাখি দেখেছি। প্রজননকালে এর পুরুষ প্রজাতিটি পরিশ্রমী হয় বেশি। এ সময় তারা শাপলা পাতা, কলমি, পদ্মপাতা বা এ জাতীয় ভাসমান অনান্য উদ্ভিদের পাতার ওপর বাসা বানায়। স্ত্রী এতে ডিম পেড়ে সরে যায়। পুরুষ একাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। এদেরকে জার্মনি ও কলমিবনেও বাস করতে দেখেছি।”

হাওরে পাখি শিকারিদের উৎপাত ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জলময়ূরসহ অন্য অনেক পাখির অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে বলে জানান সিতেশ রঞ্জন।

তিনি বলেন, “এসব প্রাণীর কথা বিবেচনা করে জীববৈচিত্রের আধার হাইল হাওর সংরক্ষণ এখনই জরুরি।”

মৌলভীবাজার প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, হাইল হাওরের বাইক্কা বিল নামে একটি এলাকা ইতোমধ্যেই সরকার খননের পর সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে। তাছাড়া হাওরে পাখিদের উপযোগী কিছু গাছ লাগানো হয়েছে। সেখানে পাখিরা বাসা বাঁধতে পারে। তবে হাওরের সব বিল খনন ও সংরক্ষণ করতে পারলে সব ধরনের পাখি, মাছ ও জলজ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা যাবে।