ডিমলায় তিস্তার স্পারে ভাঙন, হুমকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প

তিস্তা নদীর স্পার বাঁধ ভেঙে নীলফামারীর ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের চারটি চরগ্রামের সহ্রসাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2021, 04:32 PM
Updated : 31 August 2021, 04:32 PM

অব্যাহত ভাঙনে হুমিকর মুখে পড়েছে ওই ইউনিয়নের কুঠিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি।

বাঁধ রক্ষায় মঙ্গলবার ভাঙন স্থানে বালির বস্তা ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে বিকালে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী। এর আগে সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি দল এলাকা পরিদর্শন করেছে।

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, গত রোববার (২৯ অগাস্ট) তিস্তা নদীর পানির তোড়ে ডিমলার ঝুনাগাছ চাপনী ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ী গ্রামে নদীর দুই নম্বর স্পার বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়।

“সেদিন বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হলেও মধ্যরাতে বাঁধের দেড়শ মিটার ভেঙে ওই ইউনিয়নের ভাবনচুর, দক্ষিণ সোনাখুলি, ভেন্ডাবাড়ি ও কুটিপাড়া গুচ্ছগ্রাম (আশ্রয়ণ প্রকল্প) প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় অসংখ্য আবাদী জমি।”

সোমবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করে যা মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত রাখে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, বাঁধ ভেঙে তিস্তার পানিতে ইউনিয়নের চারটি চরগ্রাম প্লাবিত হওয়ায় বন্যাকবলিত হয়েছে প্রায় এক হাজার পরিবার। মঙ্গলবার পানি কিছুটা কমলেও একশ পরিবারের বাড়ি-ঘরে পানি রয়ে গেছে।

“ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের কুটিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০ পরিবার। ওই ৪০ পরিবারসহ শতাধিক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ে সরে গেছে।”

চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা বুধবার বিতরণ করা হবে।

তিস্তা নদীর ডানতীর প্রধান বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের নবীর উদ্দিন বলেন, বাঁধ ভেঙে নদীর পানি গ্রামে প্রবেশ করায় বাড়ি-ঘরসহ আমার ৫ বিঘার আমন ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ঘর-বাড়ি ভেঙে রোববার দুপুর থেকে স্ত্রী, সন্তানসহ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।”

একই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ওই গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, “আমার বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। যখন তখন বৃষ্টি হওয়ায় খুব কষ্টে আছি হামরা।”

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, “রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত স্পার বাঁধের প্রায় দেড়শ মিটার অংশ ভেঙে নদীরগর্ভে বিলীন হয়েছে। রোববার থেকে সেখানে বালির বস্তা ফেলা অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে যাতে আর ভাঙতে না পারে এ জন্য মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ওই স্থানে এক হাজার বালির বস্তা ফেলা হয়েছে।”

সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছেন জানিয়ে তিনি  বলেন, ইতিমধ্যে গত সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।”

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে সকাল ৬টায় ৪০, সকাল ৯টায় ৪২ এবং বেলা ১২টায় ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।