শিবচরে কোটি টাকার গুচ্ছগ্রাম পরিত্যক্ত, তদন্ত চায় এলাকাবাসী

মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মার চরে হস্তান্তরের দুই বছর পরেও কোটি টাকায় নির্মিত গুচ্ছগ্রামে কেউ থাকে না। নাগরিক সুবিধা না থাকায় হতদরিদ্ররা এখান থেকে চলে গেছে।

রিপনচন্দ্র মল্লিক মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2021, 02:29 PM
Updated : 30 August 2021, 02:29 PM

দুর্নীতির কারণে সরকারের এই পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে বলে মনে করে নাগরিক সমাজ।

গুচ্ছগ্রামটি পদ্মার চরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।

এদিকে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ২০টি ঘর। বাকি ঘরগুলোর অবস্থাও নাজুক।

জেলা প্রশাসন জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রা মৌজায় নির্মাণ করা হয় হতদরিদ্রদের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ৯০টি পরিবারের কাছে ঘরগুলো সরকারের পক্ষ থেকে হস্তান্তরও করা হয়।

জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে পদ্মার চরে হওয়ায় গুচ্ছগ্রামটি যাতায়াতে সমস্যা, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। প্রথমে কিছুদিন বসবাস করলেও নানা সমস্যার কারণেই ঘরগুলো ছেড়ে চলে গেছে হতদরিদ্র মানুষগুলো।

বর্তমানে গুচ্ছগ্রামের চারপাশ ছেয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায়। অনেক ঘর ভেঙেচুরে গেছে। কিছু ঘর তলিয়ে গেছে পদ্মার ভাঙনে। এখন গুচ্ছগ্রাম হয়েছে গরু ছাগল চড়ানোর স্থান।

এখন এই গুচ্ছগ্রামে নদীভাঙনের শিকার তিনটি পরিবার [বরাদ্দ পাওয়া পরিবার নয়] এবং বরাদ্দ পাওয়া একটি পরিবার সেখানে মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয় নিলেও বাকি বরাদ্দ পাওয়া ৮৯টি সুবিধাভোগী পরিবারের কেউ এখানে থাকে না।

বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে একটি মাত্র পরিবার এই গুচ্ছগ্রামে থাকে।

সেই পরিবারের সদস্য জয়তুন বিবি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে যারা ঘর পাইছে তাদের অন্য জায়গায় থাকার জমিন আছে বলেই তারা এখানে থাকে না। আমাদের কোনো জমিন নাই; তাই এখানে থাকি।”

নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারানো আরও তিনটি পরিবার এই গুচ্ছগ্রামের ফাঁকা ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা জানালেন একই ধরনের কথা।

রবিউল শেখ নামের এক আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তি বললেন, “নদী ভাঙনের কারণে আমাদের এখন থাকার জায়গা নেই। তাই এই ফাঁকা ঘরে এসে থাকতেছি। আমরা কোনো ঘর বরাদ্দ পাই নাই। এমনিতেই এই ঘরে আশ্রয় নিছি।”

ঘরগুলোর বেহাল এবং বসবাসের অনুযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানালেন আরেক আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্য শেফালি বেগম।

তিনি বলেন, “টিন দিয়ে পানি পড়ে। ঘরের নিচে মাটি নেই। বাথরুমও ভেঙে গেছে। কারেন্ট নাই। আমাদের থাকার আপাতত কোনো জায়গা নেই বলে এখানে আশ্রয় নিছি।”

একই ধরনের মন্তব্য করলেন আরেক বাসিন্দা আকলিমা বেগম।

পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যে অন্তত ২০টি ঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ঘরগুলোর অবস্থাও নাজুক। গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি না তা উল্লেখ করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।

টিআইবির মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য রাজন মাহমুদ বলেন, শিবচরের এই গুচ্ছগ্রামটি জনবিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকায় করা হয়েছে; তাই মনে হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনায় করা হয়নি বলেই এই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি পুরো ভেস্তে গেছে। এই গুচ্ছগ্রাম হতদরিদ্র মানুষের জন্য করা হলেও বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ঘরগুলোও এখন হতদরিদ্র অবস্থার মত হয়েছে।

“সরকারের এই মহতি উদ্যোগ কেন সঠিক পরিকল্পনা করে করা হয়নি সেটির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি।”

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মার চরে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের পরিকল্পনার ত্রুটি থাকতে পারে। সরেজমিন পরির্দশন শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিবচরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চরে কেন সরকারের এই প্রকল্পটি করা হয়েছে তার খোঁজ-খবর নিয়ে এটিকে আবার বসবাসের উপযোগী করা যায় কি না দেখতে হবে বলে তিনি জানান।