সাভারে দুই সড়কে খানাখন্দের ভোগান্তি

দেশের সবচেয়ে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে আশুলিয়ার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক আর বিশমাইল-জিরাবো সড়ক দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2021, 02:05 PM
Updated : 28 August 2021, 02:05 PM

সড়ক সংস্কার না করায় আশুলিয়ার জামগড়া, ইউনিক, শিমুলতলা, জিরাবো, কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবার খানাখন্দে ভরা এসব সড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটনায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এ সড়কের শিমুলতলা, ইউনিক ও জামগড়া চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের।

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, দীর্ঘদিনেও ড্রেনেজের কাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং বিভিন্ন কল-কারখানার পানি সরাসরি সড়কে পড়ার কারণেই পানি জমে সড়কে খনাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দের কারণে সড়কটিতে কোথাও হাটু পানি জমে রয়েছে।

যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে যানজট।

আবার সড়কের কোথাও ভাংগা অংশ ইট বিছিয়ে জোড়াতালি সংস্কার করতে দেখা গেছে।

ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) আব্দুস সালাম জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামগড়া, শিমুলতলা, ইউনিক এলাকায় সড়কে ভয়াবহ ভাঙনের কারণে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া যানজটের আর কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, ভাঙা সড়কের বিষয়টি একাধিকবার সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তারা শুধু বলছে ‘এই রোডটি হাইওয়ে রোড, সড়ক প্রসস্তকরণের জন্য টেন্ডার হয়েছে।’

আপাতত ছোট-বড় গর্ত অস্থায়ীভাবে ইট ফেলে মেরামত করার চেষ্টা করছে সওজ কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ যে নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়ক সংস্কার করছে। সেই ইটের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করলেই ইট ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে, নয়তো সরে যাচ্ছে।

সামান্য বৃষ্টিতে বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর সড়কটিতে পানি জমে থাকায় টিআই আব্দুস সালাম বলেন, সড়কের পানি নামার এক মাত্র পথ ছিল ‘নয়নজুড়ি খাল। দখলের কারণে ৩০ ফুট চওড়া খালটির এখন তিন ফুটের মতো রয়েছে। এ কারণে সড়কে পানি বের হতে না পারায় পানি জমে থাকছে।

তবে জামগড়া এলাকায় নিম্নমানের ইট বিছিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজে নিয়েজিত শ্রমিকরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সড়কের শিমুলতলা এলাকায় যানজটে আটকে থাকা অটোরিকা চালক মো. আলম বলেন, এ যানজট নিত্য দিনের। সড়ক ভাংগাচুড়া ও পানি জমে থাকায় গাড়ি চলাচল করতে পারে না তাই এই যানজটের কারণ। এ যানজট কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টাও পার হয়ে যায়।

মহাসড়কের পাশে চা দোকানী মো. মঞ্জু বলেন, প্রায় মাস খানেক ধরে বাইপাই-আব্দুল্লাহপুর এ সড়কটির বেহাল অবস্থা। শিমুলতলা ও ইউনিক এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জিরাবো-বিশমাইল আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কেরও বেহাল অবস্থা দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার কয়েক লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন সড়কগুলো সংস্কার না করায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বিশমাইল-জিরাবো আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, বাস-ট্রাক ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার যানবাহনসহ হাজারো পরিবহন চলাচল করে। পুরো রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে  পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জিরাব থেকে কাঠগড়া, আমতলা পর্যন্ত এ সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলও দুরূহ ব্যাপার। প্রতিদিনই এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উল্টে যাচ্ছে রিকশা, অটোরিকশা এবং রাস্তার মাঝখানে আটকে যাচ্ছে ভারী যানবাহন।

কুটুরিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শফিক দেওয়ান বলেন, “বিশমাইল-জিরাবো সড়কটির দুই পাশে বড় বড় কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় সড়কটি নিচু হয়ে গেছে।

“ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি নিয়ে জনগণ চলাচল করলেও জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দুর্ভোগ লাঘবে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।”

পোশাক শ্রমিক নুর আলম বলেন, কাঠগড়া বাজারের সামনে সড়কে গর্তের কারণে প্রায়ই অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনায় শিকার হচ্ছে অহরহ। প্রতিদিনই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনায় পড়ছেন যাত্রীরা।

এছাড়া আমতলা এলাকার বড় গর্তে মধ্যে মাঝে মধ্যেই ট্রাক, কভার্ডভ্যানসহ মালবাহী গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এ সড়কে সবসময় যানজট লেগেই থাকে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরাও অনেক কষ্ট করে কর্মস্থলে যাতায়াত করি। ভাঙা সড়কের কারণে অনেক সময় অটো না পাওয়ায় কাঁদা পানিতে হেঁটে আসেতে গিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়।

পোশাক শ্রমিক জিয়াউর রহমান জানান, আগে ১০ মিনিটে বাসা থেকে অফিসে যেতেন। এখন রাস্তার কারণে বেশি সময় নিয়েও অফিসে সময় মতো যেতে পারেন না।

জিরাবো এলাকার সিলভার এ্যাপারেলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক নুরুর রহমান জানান, সড়কের এই ভয়াবহতার কারণে শিপমেন্টের মালও সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় ক্ষতি হচ্ছে। প্রায়ই সড়কের গর্তে ট্রান্সপোর্টের গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপদের ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন এবং সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর রেজাউল করিম একাঠিকবার চেষ্টা করলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।