গোবিন্দগঞ্জে ‘ইপিজেড নির্মাণ পরিকল্পনার’ প্রতিবাদ সাঁওতালদের

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল [ইপিজেড] না করার দাবি করছেন এখানে বসবাসকারী সাঁওতালরা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2021, 05:24 PM
Updated : 23 August 2021, 05:24 PM

এই দাবিতে সোমবার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়কে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকায় অবরোধ করেছেন সাঁওতালরা।

বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। লাঠি ও তির-ধনুক হাতে দুই শতাধিক সাঁওতাল এতে অংশ নেন।

সড়ক অবরোধ চলাকালে বক্তব্য দেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।

তিনি বলেন, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় সাঁওতালদের পৈত্রিক জমিতে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এখানে ইপিজেড নির্মাণ করা হলে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমি থাকবে না। তাই এখানে ইপেজেট নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

এখানে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি হুমকি দেন।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল কবির বলেন, এখানে ইপিজেড নির্মিত হলে অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সেখানে সাঁওতালদেরও কর্মসংস্থান হবে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

“এসব বিষয় নিয়ে আগামী কাল [মঙ্গলবার] বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটির (বেপজা) চেয়ারম্যান এলাকা পরিদর্শন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় যোগদানের কথা রয়েছে।” 

সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গ করে ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। ফলে গত ২০১৫ সালে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙালি অধিগ্রহণ চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে তাদের পূর্বপুরুদের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে।

এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই খামারের কিছু এলাকায় তারা চারটি বড় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে একই বছরের ৬ নভেম্বর ওই খামারের বাকি জমিতে চাষ করা আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ সদস্য তিরবিদ্ধ ও ৪ জন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে তিন সাঁওতাল মারা যান। পরবর্তীতে পুলিশ এক অভিযানে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে থোমাস হেমব্রম বাদি হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। কিন্তু দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে মূল আসামিদের নাম বাদ দেওয়ায় ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী থমাস হেমব্রম অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক পার্থ ভদ্র শুনানি শেষে অধিকতর তদন্ত করতে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।