ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল যেভাবে গিনেস বুকে

স্কিপিং রোপের জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ায় মনে চাপা কষ্ট ছিল ঠাকুরগাঁওয়ের ১৮ বছরের তরুণ রাসেল ইসলামের। সেই কষ্ট তার ঘুচেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়ে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিমো. শাকিল আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2021, 10:14 AM
Updated : 6 August 2021, 10:14 AM

এক পায়ে ৩০ সেকেন্ডে সবচেয়ে বেশিবার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ডটি এখন রাসেলের দখলে।

এই ক্যাটাগরিতে গিনেস বুকের আগের রেকর্ডটি ছিল ১৪৪ বার লাফানোর। ৩০ সেকেন্ডে ১৪৫ বার লাফিয়ে সেই রেকর্ড নিজের করে নেন রাসেল। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ২ জানুয়ারি তার এই কৃতিত্ব রেকর্ডভুক্ত হয়।

এক পায়ে এক মিনিটে সবচেয়ে বেশি ২৫৬ লাফানোর আগের রেকর্ডটিও ওই সময় ভেঙে ফেলেন রাসেল।  ২৫৮ বার লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ডধারী হিসেবে গিনেস কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় সেই খেতাব তিনি হারান।

এপ্রিলে হিমাংশু প্রজাপতি নামে ভারতীয় এক তরুণ ২৫৯ বার লাফিয়ে এক মিনিটের রেকর্ডটি নিজের করে নেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের সিরাজপাড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে রাসেল ইসলাম শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছেন। মহামারীতে কলেজ বন্ধ থাকলেও তার খেলাধুলা থেমে নেই। 

শুক্রবার সকালে রাসেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলাসহ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে রাসেলকে দেখতে। গিনেস বুকে নাম ওঠায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন সবাই।

রাসেলের বাবা বজরুল রহমান পেশায় দিনমজুর। ছেলের সাফল্য তার পরিবারে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছে।

বজরুল রহমান জানালেন, তার তিন ছেলের মধ্যে রাসেল মেজো। মথুরাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন।

স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্কিপিং, ক্রিকেট, ফুটবল, উষু, অ্যাথেলেটিক্সসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন রাসেল। স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় স্কুল পর্যায়, জেলা পর্যায়, বিভাগ পর্যায় পেরিয়ে উপ-আঞ্চলিক পর্যায়েও তিনি ছিলেন চ্যাম্পিয়ন।

কিন্তু ২০১৮ সালে স্কিপিং রোপের জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে বাদ পড়েন রাসেল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মনে চাপা কষ্ট নিয়ে ছিলাম। এরপর থেকে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, সেটা হলো আমি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দেখিয়ে দিতে চাই।”

সেই লক্ষ্য সামনে রেখে নিয়মিত ইন্টারনেটে দড়ি লাফের ভিডিও দেখতে শুরু করেন রাসেল। বিশ্ব রেকর্ডগুলোতেও নজর রাখতে শুরু করেন, সেই সেঙ্গ দেখতে থাকেন স্বপ্ন।

নিজেকে প্রস্তুত করে ২০২০ সালের ৭ জুন রাসেল গিনেস বুকের কাছে ৩০ সেকেন্ডের স্কিপিং রোপ রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন। পরে ওই বছর ২৫ জুলাই আবেদন করেন ১ মিনিটের রেকর্ডটির দাবি নিয়ে।

তিন মাস পর গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিযোগিতার নিয়মসহ মেইল পান রাসেল।  সেই নিয়ম মেনে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এক পায়ে দড়ি লাফিয়ে ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ এবং চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এক মিনিটের ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে পাঠান তিনি।  

রাসেল বলেন, “যাচাই-বাছাই শেষে গিনেস কর্তৃপক্ষ মেইলে করে আমাকে জানায়, ৩০ সেকেন্ডে ১৪৪ বারের রেকর্ড ভেঙে আমি করেছি ১৪৫ বার। আর ১ মিনিটে ২৫৬ বারের রেকর্ড ভেঙে আমি করেছি ২৫৮ বার।”

চলতি বছরের ১৬ জুন ডাকবিভাগের মাধ্যমে বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সনদও হাতে পান রাসেল।

অবশ্য তার আগেই এক মিনিটে সবচেয়ে বেশিবার স্কিপিং রোপে লাফানোর রেকর্ডটি তার হাতছাড়া হয়ে যায়।

রাসেল বলেন, “স্কিপিং রোপের অনেকগুলো গিনেস রেকর্ড রয়েছে, আমি সেসব রেকর্ডও ভেঙে নিজের রেকর্ড গড়তে চাই, দেশের নাম বিশ্বে উজ্জ্বল করতে চাই। সেজন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।”

স্থানীয় সালন্দর ডিগ্রি কলেজের শরীরচর্চার শিক্ষক আফজালুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্কিপিং রোপ খেলায় রাসেলের আগ্রহ দেখে মনে হয়েছিল সে সফল হবে। কিন্তু সে এত্ত বড় রেকর্ড গড়বে তা মনে হয়নি। রাসেল শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব নয়, সে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।”

আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, “রাসেল আমাদের গর্ব। স্কিপিং রোপ প্রতিযোগিতায় সে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে; এটি গর্বের। রাসেল যেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে সে বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা তদারকি করবে।”

ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গিনেস বুকে নাম তোলা সহজ বিষয় নয়।

“সে কঠিন কাজটিকে রাসেল ইসলাম সহজ করে ফেলে গিনেস বুকের রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে। রাসেলের এই কৃতিত্ব ঠাকুরগাঁওসহ দেশের জন্য গৌরবের বিষয়। রাসেলের এই ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য জেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।”