দুর্গম পাহাড়ে আগে টিকা পরে নাম নিবন্ধন

দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রি এবং তিন্দুতে ভোটার আইডি কার্ড দেখে টিকা দেওয়ার পর গ্রহীতার নাম নিবন্ধনের পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন।

উসিথোয়াই মারমা বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2021, 11:48 AM
Updated : 3 August 2021, 11:49 AM

তবে পাহাড়ি কয়েকটি ইউনিয়নের টিকাদান কেন্দ্রে আসতে অনেক গ্রামবাসীর কয়েক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হবে। মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরের এই এলাকাবাসীদের টিকা দান নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

৭ অগাস্ট থেকে মহামারীর মোকাবেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ নিয়ে বান্দরবানেও প্রচার চলছে।

মঙ্গলবার সকালে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুর্গম এলাকা হওয়ায় থানচি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে প্রথমে একটি ইউনিয়নে তিন দিনের টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এরপর উপজেলার বাকি তিনটি ইউনিয়নের লোকজনদের টিকা দেওয়া হবে।

তিনি জানান, ৭ থেকে ৯ অগাস্ট থানচির সীমান্তবর্তী বড়মদক, ছোটমদক ও রেমাক্রি বাজার এলাকায় টিকা দেওয়া হবে। এরপর উপজেলার বাকি তিনটি ইউনিয়নে ১০ থেকে ১২ অগাস্ট করোনাভাইরাসে টিকা দেবেন তারা।

মিয়ারনমার সীমান্তবর্তী এলাকা বড়মদক বাজার পাড়া

থানচি উপজেলার রেমাক্রি এবং তিন্দু এ দুই ইউনিয়ন পুরোপুরি মোবাইল নেটওয়ার্কবিহীন এলাকা। এ কারণে ওয়ার্ডভিত্তিক করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি সদস্যদের মাধ্যমে গত সোমবার থেকেই টিকার ব্যাপারে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ দুই ইউনিয়নে লোকজনদের শুধু ভোটার আইডি কার্ড দেখে আগে টিকা দেওয়া হবে। পরে উপজেলা সদরে এসে তাদের নাম নিবন্ধন করা হবে বলে জানান ইউএনও আতাউল গণি ওসমানি।

এদিকে, এলাকা থেকে ফিরে রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা মঙ্গলবার সকালে জানান, তার ইউনিয়নে ওয়ার্ড মেম্বার, গ্রাম পুলিশ, কারবারি এবং হেডম্যানের মাধ্যমে সবাইকে টিকাদান সম্পর্কে জানানো হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ‘স্থানীয়রা টিকা নেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে’।

‘দুর্গম এলাকা আর এখন বর্ষা মৌসুম এর কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, “কোনো এলাকা থেকে স্পটে হেঁটে আসতে প্রায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে। যাতায়াতের ভোগান্তি তো রয়েছেই।

“এছাড়া করোনা টিকা সম্পর্কে দুর্গম এলাকা বাসিন্দাদের এখনও ভয়ভীতি এবং অসচেততা রয়েছে।”

তিন্দু ইউনিয়নে তিন্দু বাজার পাড়া

বর্ষা মৌসুমে থানচি সদর থেকে রেমাক্রি বাজার দুই ঘণ্টা, বড়মদক এবং ছোটমদক তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে পৌঁছাতে। যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম এখনও সাঙ্গু নদীপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সেখানে মারমা, ম্রো, বম এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বাস।

তিনি বলেন, “তাদেরকে বলেছি, যারা করোনা টিকা নেবে না তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং টিকা না নিলে করোনা থেকে রক্ষা পাবে না।”

দুর্গম এলাকা হলেও এমন প্রচার চালিয়ে সর্বোচ্চ মানুষকে টিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

থানচি সদর এলাকাতেও ওয়ার্ড মেম্বার এবং গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় খবর দেওয়া হচ্ছে। তবু স্থানীয়রা টিকা নিতে আসবে কিনা শঙ্কা প্রকাশ থানচি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাংসা ম্রোর।

থানচি সদর থেকে সাঙ্গু নদীর পথে তিন্দু এবং রেমাক্রি এলাকা যাওয়ার সময় বড়পাথর এলাকা

এদিকে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়ামিন হোসেন জানান, প্রত্যেক ইউনিয়নে পুরাতন ওয়ার্ড নামে তিনটি ওয়ার্ড থাকে। ৭ অগাস্ট থেকে সে-ই পুরাতন একটি ওয়ার্ড ধরে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। স্থানীয়দের সুবিধার জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডে কয়েকটি বুথ থাকবে। যাতে লোকজনের কম কষ্ট হয়।

“কেওক্রাডং পাহাড়ের মত জায়গায় আমাদের হেঁটে যেতে হবে। স্পটে ভোটার আইডি কার্ড দেখে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে আমরা তাদের রেজিস্ট্রেশন করব।”

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরও জানান, ওয়ার্ডভিত্তিক বুথের জন্য কিছু সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া স্থানীয়দের টিকা নিতে আগ্রহী করে তোলার জন্য পাড়াপ্রধান কারবারি এবং মৌজাপ্রধান হেডম্যানদেরও যুক্ত করে সবাইকে টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাঙ্গু নদীর পথে রেমাক্রিমুখ এলাকা

ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭ অগাস্ট থেকে করোনাভাইরাসের টিকাদান সম্পর্কে প্রত্যেক ওয়ার্ড সদস্যদের মাধ্যমে এলাকাবাসীদের অবহিত করার কথা জানিয়েছেন রুমা উপজেলার স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি।

রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা জানান, টিকা দেওয়ার বিষয়ে এলাকার সবাইকে এখন থেকেই ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। কিছু এলাকা দুর্গম এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সেখানে খবর পৌঁছতে একটু সময় লাগে। এজন্য আগেভাগে খবর দিতে হচ্ছে।

রুমা সদর থেকে বগালেক-কেওক্রাডং সড়ক

জেলা সিভলি সার্জন ডা. অংসুইপ্রু মারমা বলেন, “দুর্গম এলাকার ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম সমতলের মত হবে না। এটা বিশেষ ব্যবস্থায় আয়োজন করতে হবে।”

এজন্য প্রতিটি উপজেলায় টিকাদান সম্পর্কে গত সোমবার থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যবিভাগের এ কর্মকর্তা।