৫৫ বছর পর চিলাহাটিতে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন, চলবে নিয়মিত

চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৫ বছর পর আবার রেল চালুর উদ্বোধনের সাড়ে সাত মাস পর নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 03:13 PM
Updated : 1 August 2021, 04:17 PM

রোববার ভারত থেকে একটি পাথর বোঝাই মালবাহী ট্রেন আসার মধ্য দিয়ে এই পথে নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছেন উভয় দেশের কর্মকর্তারা।

ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতীয় রেলওয়ে রোববার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ডামডিম স্টেশন থেকে পাথর বোঝাই প্রথম মালবাহী ট্রেন বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

রোববার বিকালে পণ্যবাহী ট্রেনের ৪০টি ওয়াগনে দুই হাজার ২৮৫ দশমিক ২০ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিলাহাটি রেলস্টেশন মাস্টার আশরাফুল ইসলাম।

তিনি জানান, প্রতি ওয়াগনে ৫৯ মেট্রিক টন করে পাথর রয়েছে। প্রথম ট্রেন থেকে ভাড়া বাবদ বাংলাদেশ রেলওয়ে ’১৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করবে’।

এই চালানের পাথর আমদানি থেকে সরকার ১১ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করবে বলে জানান নীলফামারী সদর সার্কেলের কাস্টমস কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায়।

রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান জানান, পাথরবোঝাই মালবাহী ৪০টি বগীর পাথর যশোরের নওয়াপাড়া স্টেশনে খালাশ হবে।

আমদানিকারক চায়না সেভেন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাক্টশন লিমিটেডের পক্ষে দিনাজপুরে সিএন্ডএফ এজেন্ট খান এ সন্সের প্রতিনিধি আমিনুর ইসলাম বলেন, “ভারত থেকে এ পথে পাথর আমদানিতে ৪০টি ওয়াগানে খরচ কমছে আট থেকে ১০ লাখ টাকা। দূরত্ব কমায় সময়ও কম লাগছে।”

বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১ অগাস্ট থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট্রে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় দেশের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

“সপ্তাহে কয় দিন ও কয়টি পণ্যবাহী ট্রেন আসবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিডিউল এখনও আমরা হাতে পাইনি। তবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।“

এই পথে মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাত্রীবাহী ট্রেনও চলাচল করবে।

এ জন্য উভয় দেশের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ নামের একটি ট্রেন চালু করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।

২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এই রেলপথ আবার চালুর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

এরপর চলতি বছর ২৭ মার্চ থেকে এই রেলপথে মিতালী এক্সপ্রেস চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সপ্তাহে দুই দিন ঢাকা ও জলপাইগুড়ি থেকে এই ট্রেন চলাচল করবে। কোভিড মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তা আর চালু করা যায়নি।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ পর্যন্ত চালু সাতটি রেল সংযোগের মধ্যে চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে পঞ্চম রেল সংযোগ পুনস্থাপিত হল।

বাকি চার রেলপথ হল- বেনাপোল (বাংলাদেশ)- পেট্রাপোল (ভারত) , দর্শনা (বাংলাদেশ)- গেদে (ভারত), রহনপুর (বাংলাদেশ)-সিংহাবাদ (ভারত) এবং বিরল (বাংলাদেশ)- রাধিকাপুর (ভারত)।

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীই উভয় দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগের সব রেল সংযোগ পুনস্থাপনের কথা বলেছেন।

রোববার ভারতীয় হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাথর ও বোল্ডার, খাদ্যশস্য, তাজা ফল, রাসায়নিক সার, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, ফ্লাই অ্যাশ, ক্লে, চুনাপাথর, কাঠ ও টিম্বার প্রভৃতি।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে সব রপ্তানিযোগ্য পণ্যই এই পথে পাঠানো যাবে।

নীলফামারী চেম্বারের সভাপতি মারুফ জামান বলেন, ৫৫ বছর পর সমস্যার সমাধান হল।

রোববার আসা ভারতীয় ট্রেনে ছিলেন রেলওয়ের সিনিয়র গার্ড মুকেশ কুমার সিং এবং লোকো মাস্টার সঞ্জীত পাল চৌধুরী ও অরজিৎ রায়।

বাংলাদেশের পক্ষে চিলাহাটি স্টেশনে তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় লোকোমোটিভ প্রকৌশলী আশিষ কুমার, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহীম, রাজস্ব কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায়, রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান, ডোমার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসানসহ অন্যরা।

আরও পড়ন: