উদাসীনতায় কম বয়সীদের মৃত্যু বেড়েছে: খুলনার সিভিল সার্জন

খুলনায় করোনাভাইরাস চিকিৎসার হাসপাতালগুলোয় গত দুই মাসে পঞ্চাশের কম বয়সী ব্যাপক সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 12:26 PM
Updated : 1 August 2021, 12:26 PM

খুলনা নগরের পাঁচটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা চলছে। সেগুলো হল, ২শ’ শয্যার ডেডিকেটেড করোন হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এ পাঁচ হাসপাতালের তথ্যে দেখা যায়, গত জুন মাসে কোভিডে ১৮৩ জন মৃতের মধ্যে ৫০-এর কম বয়সী ছিলেন ৪৩ জন এবং ৫০-এর বেশি বয়সী ছিলেন ১৪০ জন। জুলাই মাসে ৩৫৮ জন মৃতের মধ্যে ৫০-এর কম বয়সী ১০৪ জন এবং ৫০-এ বেশি বয়সী ২৫৪ জন ছিলেন।

তাদের মধ্যে জুন মাসে ১৯ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৫ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৮ জন মারা যান। বার জুলাই মাসে ১৯ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৩৮ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৬৫ জন মারা গেছেন। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে কমবয়সী বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, “মূলত অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে কম বয়সীদের মৃত্যু বেড়েছে।”

এ কথার ব্যাখ্যা সিভিল সার্জন বলেন, কম বয়সীরা আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই মনে করছেন, কোভিডে তাদের কিছু হবে না। সে কারণে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অথবা নিজেরাই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ আবার ওষুধ খেতেও অবহেলা করেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেক নিচে নেমে যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে।

তবে খুলনার এ হাসপাতালগুলোয় এখন পর্যন্ত ১৮ বছরের নিচে কারও মৃত্যু হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

খুলনা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, এখন বয়স্ক মানুষের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদেরও মৃত্যু হচ্ছে।

রোববার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদার জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে কোভিড সংক্রমিত হয়ে ৪০ জন মারা গেছেন। এ সময়ে নতুন করে ৮৮০ জনের শরীরে কোভিড শনাক্ত হয়েছে।

“নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্ত ২৬ শতাংশের বেশি।”

শনিবার বিভাগে ১৯ জনের মৃত্যু ও ৫৭১ জন শনাক্তের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের দিনের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা বেশি হয়েছে। আর মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

এ সময় ২৪ ঘণ্টায় আরটি–পিসিআর ল্যাবে ১ হাজার ৫৫টি, জিন এক্সপার্ট যন্ত্রে ৮০টি এবং র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ২ হাজার ১৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়। মোট ৩ হাজার ৩০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৭১ জনের কোভিড শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৬৪।

তিনি আরও বলেন, শনাক্ত বিবেচনায় জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনা। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৯৬৫ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।

বিভাগে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৪২৮। মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৫৯। কোভিডে মারা যাওয়া সর্বশেষ ৪০ জনের মধ্যে কুষ্টিয়ায় ১৬ জন, যশোরে ৭ জন; খুলনা ও ঝিনাইদহে ৫ জন করে, বাগেরহাটে ৩ জন এবং চুয়াডাঙ্গায় ও নড়াইলে ২ জন করে রয়েছেন।

বিভাগে কোভিডে সর্বোচ্চ মৃত্যু খুলনা জেলায় ৬২৯ জনের এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কুষ্টিয়ায় ৫৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে । এছাড়া যশোরে ৩৫১ জন, ঝিনাইদহে ২০৭, চুয়াডাঙ্গায় ১৬৩, মেহেরপুরে ১৩৭, বাগেরহাটে ১২৬, নড়াইলে ৯৪, সাতক্ষীরায় ৮৫ ও মাগুরায় ৬৭ জন মারা গেছেন।