পরিবহনে বজ্র আঁটুনি, লকডাউনে ফসকা গেরো

পোশাক কারখানা খোলার আগের দিনেই হাজার হাজার শ্রমিকদের পদচারণায় গাজীপুরে লকডাউনের নিয়ন্ত্রণ ভেস্তে গেছে।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2021, 03:24 PM
Updated : 31 July 2021, 03:24 PM

শনিবার সকাল থেকে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ঢল নামে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী ট্রাক, প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, পণ্যবাহী খোলা ট্রাক-পিকআপে চেপে হাজার হাজার শ্রমিককে চলাচল করতে দেখা গেছে।

চন্দ্রা এলাকায় সালনা (কোনাবাড়ি) হাইওয়ে থানার ওসি মীর গোলাম ফারুক বলেন, “আমরা গণপরিবহণ চলতে দিচ্ছি না। তারপরও গ্রাম থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নেমে পড়েছে।

“ট্রাক-পিক আপে, অটো রিকশাসহ ছোট যানবাহনে করেই তারা গন্তব্যে ফিরছে। এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদী হাসান জানান, লকডাউন চলাকালে অনুমোদিত গাড়ি ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অন্য কোনো যানবাহন গাজীপুর মহানগরে ঢুকতে দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, “ফলে মহানগরের বাইরে রাজেন্দ্রপুরসহ আশেপাশে অন্য যানবাহনে নেমে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটে চলেছেন।” 

শ্রমিকদের এ পথের নানা ভোগান্তির সাথে দফায় দফায় বৃষ্টি দুর্ভোগ আরেক দফা বাড়িয়ে দেয়।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে মাওনা চৌরাস্তা প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ আসতেই পোশাক শ্রমিক নাদিম মিয়ার দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গীর কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে পরিবার নিয়ে এসেছেন তিনি।

মাওনা চৌরাস্তা টঙ্গী যেতে এক অটোরিকশা চালক ভাড়া চাইলেন ১৫০০ টাকা। ফলে ত্রিশাল থেকে টঙ্গী পৌঁছাতে তার গুণতে হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা।

নাদিম মিয়ার জানান, টাকা নয় চাকরি রক্ষাই তার প্রধান ভাবনা।

বেশি ভাড়া চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অটোচালক চালক মালেক মিয়া বলেন, সিএনজি নিয়ে মহাসড়কে হয়ে টঙ্গী যাওয়া যাবে না। কিছু পথ ঘুরে যেতে হবে। তারপরও পথে পুলিশ আটকে দেবে, মামলা দিয়ে আটক রাখবে।

“আমরা ভেতরের সড়ক ধরে টঙ্গী পর্যন্ত যাব। তাই একটু ভাড়া তো বেশি দিতেই হবে।”

এছাড়া মাওনা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক পথ যেতে মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ৪০০ টাকা, অটোরিকশায় ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, খোলা ট্রাকে জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, পিক আপ ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চাইতে দেখা যায়।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসার শ্রমিক তামিম আহমেদ জানান, রাতে রওনা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিভিন্ন রিকশা ও ভ্যান যোগে জৈনাবাজারে পৌঁছান তিনি। অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি রাস্তায় খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাসুমা আক্তার নামের জানান, তিনি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এক কারখানায় কাজ করেন। ভালুকা থেকে অটোরিকশায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার পর্যন্ত আসেন। যেখান থেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় বাকি সড়ক হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

তিনি বলেন, “স্বাভাবিক সময় রাজেন্দ্রপুর থেকে ভালুকার বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু লকডাউনে কয়েক গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এটা যেন দেখার কেউ নেই।”

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়। ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের মানুষ ট্রাক, পিকাপ, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলে চেপে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে আসছেন।

গাজীপুরে এসে যানবাহন না পেয়ে বাকি পথ হেঁটে পাড়ি দিচ্ছিলেন তাদের অনেকে।

ঢাকার মিরপুরের এক পোশাক কারখানার শ্রমিক জামাল উদ্দিন জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ঠাকুরগাঁও থেকে রওনা দিয়েছিলেন। ২ হাজার ৫০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় মাইক্রোবাসে করে চন্দ্রা ত্রিমোড়ে পৌঁছেন তিনি।

বাকি পথের যানবাহন না পেয়ে কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় বসে ছিলেন তিনি।

টঙ্গী চেরেগআলী মার্কেট এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক বেলাল হোসেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ফ্যাক্টরি থেকে এসএমএস দিয়েছে। রোববার সকাল থেকে কাজে যোগ দিতে।

“এজন্য রাত ১১টায় কাঁচামালবাহী ট্রাকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছি।”