শনিবার স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ টাকা খরচ করে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষকে ঢাকার দিকে যেতে দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোসহ পাবনার কাজিরহাট ফেরি ঘাটে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
পাবনার কাজিরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরিগুলোয় ‘পা রাখার মতো জায়গা ছিল না’।
আর বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোয় হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, পাঁচলিয়া, কড্ডার মোড় থেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা যানবাহনে গাদাগাদি করে বৃষ্টির মধ্যে তাদের যেতে দেখা যায়।
এসব জায়গায় কয়েকজন যাত্রী আক্ষেপের সঙ্গে প্রশ্ন করেন, ‘সরকার লকডাউনের মধ্যে অফিসও খুলে দেয় কেন?‘
‘বাড়ি থেকে কোনো মতে’ আরিচা পৌঁছানো গার্মেন্টসকর্মী রোমানা খাতুন বলেন, “এখান থেকে যাওয়ার জন্য কিছু প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যেতে চাইছে কিন্তু একশ’ টাকার ভাড়া ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দাবি করছেন।
“এত টাকা দিয়ে গেলে, আমার কাছে কোনো টাকা থাকবে না, তাই উপায় না পেয়ে কম টাকায় ট্রাকে যাওয়ার চিন্তা করছি।”
সিরাজগঞ্জের পোশাককর্মী শিফাত আহম্মেদ বলেন, কোরবানির ঈদ করতে বাড়ি এসেছিলাম। রোববার থেকে গার্মেন্টস খুলবে। এ খবরে ঢাকায় যাচ্ছি। বাস বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় বাধ্য হয়ে ট্রাকে যাচ্ছি।
‘চাকরি রক্ষায়’ শিশু সন্তান সঙ্গে নিয়ে পিকআপেই ঢাকার পথে রওনা হওয়া পোশাককর্মী জোসনা খাতুন বলেন, “ভাড়াও বেশি, চরম ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। তবুও কী আর করা।”
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, মানুষ মৃত্যুর ভয় না করে চাকরি বাচাঁতে ঢাকায় ছুটছেন।
“এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরাও শঙ্কার মধ্যে রয়েছি। তবুও মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।”
পাবনা শহরের বাসিন্দা ঢাকার এক পোশাক কারখানায় ঊর্ধ্বতন নির্বাহী পদে চাকরিরত ফারুক সরকার বলেন, “৫ অগাস্ট পর্যন্ত লকডাউন এবং কারখানা বন্ধের ঘোষণায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাড়িতে এসেছিলাম। হঠাৎ করে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিপদে পড়েছি। পরিবারের সদস্যদের রেখে আমাকে একাই ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে।”
পাবনার কাজিরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমান বলেন, “সকাল থেকে যে কয়টি ফেরি ছেড়ে গেছে। তার প্রতিটিতেই চার হাজারের বেশি মানুষ ছিল।
কাজিরহাট ফেরিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, “এত লোকজন আজ ঢাকায় যাচ্ছে, ঈদের আগের দিনও এত মানুষ এই রুটে চলাচল করে নাই।”
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থেকে অসংখ্য পণ্যবাহী যানবাহনে বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টসকর্মী ঢাকা যাওয়া প্রসঙ্গে কাজিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করছি, চেকপোস্টও আছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, মানুষ মৃত্যুর ভয় না করে চাকরি বাঁচাতে ঢাকায় ছুটছেন। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরাও শঙ্কার মধ্যে রয়েছি।
বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু জানন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বৃষ্টির মধ্যে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা, সিএনজি, ব্যক্তিগত গাড়িতেও অনেকেই চলাচল করেছেন। আবার কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায় করেও যাচ্ছেন।
ঈদের আগে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাসহ সব কিছু ৫ অগাস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পোশাক কারখানার মালিকদের চাপে রোববার থেকে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।