করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এতদিন শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকার অনড় থাকলেও শিল্পমালিকদের বারবার অনুরোধে সে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে।
শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী কারখানাকে রোববার সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।
এরপর শনিবার সকাল থেকে দুই ঘাট দিয়ে লোকজনের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীরা গাগাগাদি করেই উত্তাল পদ্মা পার হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই নেই।
এদিকে লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া গুণে আর বিড়ম্বনা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ঢাকায় ফিরছে মানুষ।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, রোববার থেকে গার্মেন্টস ও কলকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ফলে শনিবার সকাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী গন্তব্যে ফিরতে ঘাটে ভিড় করে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তিন চাকার বিভিন্ন পরিবহন ও মোটর সাইকেলে করে অনেক যাত্রীদের বাংলাবাজার ঘাটে আসতে দেখা গেছে। পরে সেখান থেকে ফেরিতে উঠছিলেন তারা।
বরিশাল থেকে আসা যাত্রী শাহাদাত হোসেন বলেন, “রোববার কারখানা খুলবে। ফ্যাক্টরিতে যেতেই হবে। তাই অনেক কষ্ট করে এসেছি। সরকার যদি গণপরিবহন ও লঞ্চ খুলে দিত তাহলে এতো ভোগান্তি হতো না। ”
ইতি নামে এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। পেটের দায়ে যেতে হচ্ছে কিন্ত সরকার আমাদের জন্য কিছু করছে না। একদিকে লকডাউন, আবার ফ্যাক্টরিও খোলা। আমরা কী করব? আমরা পড়েছি ভোগান্তিতে। এক টাকার ভাড়া দশ টাকা দিতে হচ্ছে।”
এখন বাংলাবাজার ঘাটে ১০টি ফেরি দিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে বলে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন জানান।
এদিকে শিমুলিয়া ঘাটে শনিবার সকাল থেকে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীর চাপে দশটি ফেরি দিয়ে পারাপার করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে।
পদ্মার স্রোতে সাথে পাল্লা দিতে না পারায় উপচে পড়া ভিড়েও সাতটি ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। যে ফেরিগুলো চলছে সেগুলোই লোকজন ভিড় করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। জরুরি পরিসেবার গাড়ি পারাপারের জন্য ফেরি চালু থাকলেও যাত্রীরা ফেরিতে উঠে পড়ছে।
“ফেরি ঘাটে ভিড়তেই শুরু হয় লোকজনের হুড়োহুড়ি। কে কার আগে নামবে সেই প্রতিযোগিতা। কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। অনেকে মাস্ক পর্যন্ত পরছেন না।”
এ দিকে লকাউনে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ঘাটে আসার পর লোকজন কভার্ডভ্যান ও নসিমনে করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় গুণে আবার অনেকে পায়ে হেঁটে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ফিরছেন বলে জানান এ ঘাট কর্মকর্তা।
এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি ঘাট এলাকায় কাজ করছে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন এবং যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।