মুন্সীগঞ্জে পদ্মার কয়েক মিনিটের ভাঙনে বিলীন ৮ বাড়ি

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পূর্ব হাসাইল গ্রামে পদ্মার কয়েক মিনিটের ভাঙনে আটটি বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2021, 06:37 PM
Updated : 30 July 2021, 06:37 PM

শুক্রবার সকালের এই ভাঙনের পর মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ভাঙন রোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হচ্ছে। বর্ষায় পদ্মার এই রুদ্ররূপে এলাকাটিতে এক ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। ভাঙনের কবলে বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আগে শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে মরিয়া মানুষগুলো।

তিন দশক ধরে ভাঙনের কবলে থাকা এ জনপদের অনেক এলাকা ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। 

এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙন শুরু হয়ে একের পর এক বিলীন হতে থাকে বাড়িঘর। নদী সংলগ্ন কয়েকশ মিটার এলাকার আটটি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে স্থানীয় আলম শেখের তিনটি, জিয়াসমিন বেগমের একটি, মো. খোরশেদের দুইটি ও নুর মোহাম্মদ দেওয়ানের দুইটি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কয়েকশ পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা সরকারি-বেসরকারি সম্পদ।

ভাঙনের মুখে রয়েছে এলাকার পূর্ব হাসাইল জামে মসজিদ, কবরস্থান, ধাতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতশত বসতবাড়ি।

ক্ষতিগ্রস্ত আলম শেখ বলেন, “হঠাৎ কইরা ভাঙন শুরু হইল; আমার তিনটা বসতঘর একেবারে নদীতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি ঘরের অংশ কোনো রকমে উঠানো হয়েছে। দ্রুত ভাঙন রক্ষায় আমরা ব্যবস্থা চাই। নয়ত আশপাশের সব ভেঙে নিয়ে যাবে নদী।”

জিয়াসমিন বেগম বলেন, “ঢাকায় কাজ করি; স্বামী নেই। চার সন্তান নিয়ে একটা ঘরে থাকতাম। এখন যামু কই।”

আরেক নারী জানান, তিনি ঘরের মধ্যে ছিলেন; হঠাৎ নদী ভাঙনের খবর পান। যদি তখন তিনি ঘর থেকে বের না হলে মা-মেয়ে ঘরের সঙ্গে তলিয়ে যেতেন।  

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত মো. খোরশেদ বলেন, “ঘরের চাউলের ড্রামটাও বাইর করতে পারি নাই। সব নিয়া গেল নদীতে।”

হাসাইল বানারী ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ঢালী বলেন, “যে ভাঙন দেখা দিছে যদি দ্রুত ভাঙন রক্ষায় কাজ না করে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হইবে। আমি এলাকাবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দ্রুত ভাঙন রক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”

হাসাইল বানারী ইউপি চেয়রম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “এমন হঠাৎ ভাঙন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাকার লোকজনের সব বিলীন হয়ে যায়। পরিবারগুলো এখন বড় অসহায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানিয়েছি।”

এদিকে এলাকাবাসী প্রশাসনের কেউ না আসায় আক্ষেপ করেছেন।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা পারভীন বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।”

ঘটনাস্থলে যাওয়ার ব্যাপারে ইউএনও বলেন, প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অসুস্থতার কারণে ভাঙন কবলিত এলাকায় না গেলেও ভাঙনরোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, এরই মধ্যে পদ্মা তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ৪৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশপাশি ভাঙন কবলিত বাকি অংশকেও স্থায়ী প্রকল্পের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।